বাংলা৭১নিউজ, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : বিলুপ্তির পথে বাংলার বাঘ রয়েলবেঙ্গল টাইগার। বাঘের আশ্রয়স্থল ধ্বংস, চোরা শিকারীদের উপদ্রপ, খাদ্যের অভাব, বাঘে-মানুষে দ্বন্দ এবং বনবিভাগের উদাসীনতায় অনিন্দ্য সুন্দর হিংস্র এই প্রাণীটি আজ বিপন্ন । এছাড়াও , জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা জনিত বৈরী প্রভাব এই সমস্যাকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। অথচ এক সময় দেশের প্রায় সব বনেই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ ছিল। দৃষ্টি নন্দন ও ভিন্নধর্মী দৈহিক গঠনের জন্য এরা ছিল সবার সেরা আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে। কিন্তু আমাদের এই গর্বের জাতীয় প্রাণীটি এখন সুন্দরবনে অল্প সংখ্যায় টিকে আছে। বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনে ১৯৮২ সালে বাঘের সংখ্যা ছিলো ৪৫৩টি, ২০০৪ সালে ৪৪০টি। আর সর্বশেষ ২০১৫ সালের মার্চ মাসের গণনা অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা এখন মাত্র ১০৬টি। দিন দিন কমে যাচ্ছে বাঘের এই সংখ্যা। যদিও বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর ২৯শে জুলাই পালিত হয় আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস।
সাতক্ষীরার উপকুলীয় অঞ্চলের একাধিক ব্যক্তি জানান, একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা
বাঘ সংরক্ষণ এবং বাঘের হামলায় নিহতদের স্ত্রীদের (বিধবাদের) পূর্ণবাসনের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নাম মাত্র কয়েকজনকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে এই এনজিও পরিচালক সেবার নামে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা আরো বলেন, চোরাই বাঘ শিকারিদের সাথে ওই এনজিও’র কয়েক কর্মীর গোপন সখ্যতা রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তথ্যমতে, গত ৩৭ বছরে চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের হামলা, গ্রামবাসীদের পিটুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সুন্দরবনের ৭০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে দু’শতাধিক মানুষ। যদিও কেউ কেউ বলেছেন, এ তথ্য যথাযুক্ত নয়। বাঘের মারা যাওয়ার সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) শোয়েব খান জানান, ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ সার্ভের মাঠ পর্যায়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে, বাঘের সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা এখনো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, চোরশিকারিদের বিরুদ্ধে বনবিভাগ সদা সতর্কাবস্থানে রয়েছে। বাঘেরা বনে যাতে নির্বিঘেœ বিচরণ করতে পারে এবং তাদের সুরক্ষায় বনবিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
বিভাগীয় বনকর্মকর্তা ডিএফও জানান, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ সার্ভের মাঠ পর্যায়ের কাজ চলতি বছরের মে মাসে শেষ হয়েছে। আট শতাধিক ক্যামেরায় তোলা ছবি পর্যালোচনা করে বাঘের ঘনত্ব নিরুপণের কাজ শেষ হলেও বাঘের সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা এখনও সম্ভব হয়নি। সমস্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে বাঘের সঠিক সংখ্যাটি জানানো যাবে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস