পালিয়ে বিয়ে করেছেন,বাবা মেনে নেন নি,বিয়ের পরে দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে, লেখালেখির জন্য সরকারি চাকরি স্বেচ্ছায় ছেড়েছেন,নারীদের এক জন হয়ে তাদের নিজস্ব জগতের কথা, যন্ত্রণা, সমস্যা আর উপলব্ধির কথা লেখায় শোনাতেন পাঠকদের,তিনি সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য৷
শাড়ি পরতেন ক্লাস এইট থেকেই সেদিন একটু ঝকঝকে শাড়ি পরে বের হয়েছিলেন বাড়ির কারও তেমন নজর কাড়েনি।অবশ্য বন্ধুর পাঞ্জাবি ধার করে পরেছিলেন পাত্র,রেজিস্ট্রির পর দু’জনে বাড়ি ফিরে এল। পালিয়ে বিয়ে,মেয়ের এমন দুঃসাহস বাবা মেনে নেননি। পালিয়ে বিয়ে করলে যা হয়, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল। এরপরের লড়াইটা দারিদ্রের সঙ্গে এক কামরার চিলতে ঘর। দরমার পার্টিশন করা বারান্দায় রান্না। আর বাথরুম কিছুটা দূরে। ইট পাতা উঠোন পেরিয়ে টিনের চালের তলায়। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই তিনি লিখতে ভালবাসতেন,সেই লেখার প্রথম পাঠক ছিলেন বাবা, বিয়ের পরে থেমে গিয়েছিল লেখালেখি কিন্তু সুচিত্রা ভট্টাচার্য প্রবল প্রতিভা নিয়ে সাহিত্যের আঙিনায় বিকশিত হয়ে বারেবারে পাঠককে মুগ্ধ করেছেন৷
লেডি ব্রেবোর্ন ভর্তি হয়েছিলেন কেমিস্ট্রি নিয়ে অবশ্য অল্প বয়সে মাতৃত্ব সামলাতে গিয়ে কলেজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন, বাড়ির সঙ্গে আবার যোগাযোগ হয়েছে,আবার কলেজে ভর্তি হয়েছেন,যদিও সেখানে কোনওদিন ব্যাগ থেকে খাতার বদলে মাঝে মধ্যেই বেরিয়েছে মেয়ের মোজা বা ফিডিং বোতল।
ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ’৭৯-তে ‘ওজন ও পরিমাপ’ দফতরে চাকরি পেয়েছিল। যখন ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতে যেতেন। তখনই প্রেমেন মামার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যায়। তাঁর উপন্যাস ‘হেমন্তের পাখি’তে রয়েছে হেমেন মামা।
লেখালেখির প্রতি সুচিত্রার ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ থাকলেও, নিজের লেখা শুরু হয়েছিল সত্তর দশকের শেষ ভাগে। নারীদের এক জন হয়ে তাদের নিজস্ব জগতের কথা, যন্ত্রণা, সমস্যা আর উপলব্ধির কথাই তিনি তাঁর লেখায় শোনাতেন পাঠকদের। মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্কের নানা দিক উঠে এসেছে তাঁর লেখায়৷তাঁর গল্প উপন্যাস প্রবল জনপ্রিয়তা পায়। ‘অলীক সুখ’, ‘কাচের দেয়াল’ ইত্যাদি উপন্যাস রীতিমতো সাড়া ফেলে পাঠক মহলে৷গত শতকের সত্তরের দশকের শেষের দিকে ছোট গল্প লেখা শুরু করেন তিনি৷ আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে উপন্যাস লেখার শুরু৷ তাঁর ছোট গল্প টিনএজারদের মধ্যে বরাবরই জনপ্রিয়, তবে ‘কাচের দেওয়াল’ জনপ্রিয়তার নিরিখে ভেঙে দিয়েছিল বয়সের সব ব্যবধান৷
সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখায় পাঠক খুঁজে পায় সেইসব নারীদের যারা প্রতিদিন জিতে যায় নিজের কাছে, আপনার কাছে। প্রত্যেকেই যে যার মতো করে উড়তে চায়। কখনও একা, কখনও প্রিয় মানুষটির সঙ্গে।
লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘দহন’ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ১৯৯৭ সালে চিত্র-পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মাণ করেন বাংলা চলচ্চিত্র। পরবর্তীকালে তাঁর উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছে ‘ইচ্ছে’, ‘অলীক সুখ’, ‘প্রাক্তন’ নামক কয়েকটি বাংলা চলচ্চিত্র।
শেষ জীবনে ডান হাত ভেঙে গেলেও থামানো যায়নি, ল্যাপটপে বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে টাইপ করে লেখালিখি করতেন অকালেই থেমেছিল তাঁর কলম,ক্ষতি হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের৷ আজ সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের জন্মদিন।
সূত্র : ডা: ইন্দ্রনীল সাহা এর ফেসবুক ওয়াল