বাংলা৭১নিউজ, নীলফামারী: ‘আমরা সবাই নিঃস্ব হয়ে গেছি। মাছ চাষই ছিলো আমাদের উপার্জনের একমাত্র পথ কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা নিঃস্ব করে দিয়েছে আমাদের। দিশেহারা হয়ে পড়েছি আমরা। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমিতির ১৬৭ জন চাষীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে পড়েছে।’
কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের ছোটখাতা কুমলাই মৎস্যচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল সরকার।
তিনি জানান, দুই বছর ধরে মাছ চাষ করে উপার্জন করে আসছিলেন সমিতির সদস্যরা। ৮০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছিলেন তারা।
রুই, কাতলা, মৃগেল, গ্রাস কার্প, পুটিকার্প, হাংরিসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করেন। বছরে দুই থেকে তিনবার মাছ তুলে বিক্রি করতেন চাষীরা। মাছের টাকায় সংসার চলতো সমিতির সদস্যদের কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা তাদের উপার্জনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, বন্যায় তিস্তা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানির তোড়ে ভেসে যায় সমিতির ৩’শ একরের উপর নদীর সব মাছ।
তিনি বলেন, ১ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। বানের পানিতে স্বপ্ন ভেসে যাওয়ায় মাছ চাষীরা পড়েছেন চরম অর্থ সঙ্কটে। আগামী দিনগুলো চালানো যেন কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
মৎস্যচাষী রশিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষে এতবড় পুকুরে আর মাছের পোনা অবমুক্ত করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের সাধ্য নেই। ধার কর্য কিংবা এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষে বিনিয়োগ করেছি আমরা। সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয় যাতে আমাদের জন্য।
শুধু ১৬৭ জন মাছ চাষীই নয় নীলফামারী জেলার ১৮ হাজার ১০৭ জনের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে এবারের ভয়াবহ বন্যা।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, ২ হাজার ২৩০ হেক্টর আয়তনের ২৪ হাজার ৯৭০টি পুকুরের মাছ ভেসে যায় উত্তরাঞ্চলের ইতিহাসে স্মরণকালের বন্যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের মধ্যে নীলফামারী সদরে ৩০২০ জন, সৈয়দপুরে ১৬১০ জন, ডোমারে ৪৩৪০ জন, ডিমলায় ২৫০০ জন, জলঢাকায় ৪৮১২ জন ও কিশোরগঞ্জে ১৮২৫ জন রয়েছেন।
দফতরটি জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য ৩৯৪ মেট্রিক টন মাছের পোনা এবং ২১২৩ মেট্রিক টন খাদ্যের প্রয়োজন হবে।
জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসান ফেরদৌস সরকার জানান, ভয়াবহ বন্যায় নীলফামারী জেলায় প্রায় ৮১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সহায়তার জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিরুপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বরাদ্দ আসলে পুনর্বাসনের নীতিমালা অনুসারে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষীদের ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করার জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পচিালক (এমডি) বরাবর আবেদন করা হয়েছে মন্তব্য করে সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার জানান, ঋণ মওকুফের পাশাপাশি তাদের পুনরায় ঋণ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে করে মাছচাষীরা আবার দাঁড়াতে পারেন।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস