দূষণমুক্ত নদীর দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার থেকে দুইদিনের বালু নদী উৎসব শুরু হচ্ছে। রাজধানীর খিলগাঁও-এর ত্রিমোহনী এলাকার ইটাখোলায় মূল অনুষ্ঠান ও বালু নদীতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হবে। দুইদিনের উৎসবে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম প্রধান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন বারোগ্রাম বালু নদী মোর্চার সদস্য সচিব মো. আমজাদ হোসাইন। বক্তৃতা করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বারোগ্রাম বালু নদী মোর্চার আহ্বায়ক সুরুজ মিয়া, ভয়েস অব দ্যা ওল্ড ব্রম্মপুত্র ইবনুল সাইদ রানা, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের প্রকল্প সমন্বয়ক মো. কামরুজ্জামান প্রমূখ।
বালু নদী উৎসব সফল করার আহ্বান জানিয়ে শরীফ জামিল বলেন, ‘ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ক্রমশঃ শীর্ণ (ছোট) হয়ে আসছে। নদীগুলোর পানি কালো থেকে আরো কালো হচ্ছে। বিশেষ করে মহানগরীর পূর্বাঞ্চলের উপকন্ঠে প্রায় ত্রিশ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত বারোগ্রাম বর্তমানে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। খিলগাঁও, ডেমরা ও সবুজবাগ থানার ৩৬টি গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নড়াই, দেবধোলাই ও বালু নদীর পানি এখন প্রচন্ডভাবে দূষিত। পচা পানির দুর্গন্ধে পুরো এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এই ভয়াবহ দূষণ ও দখলের হাত থেকে নদীকে রক্ষায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ণ কেন্দ্রকে নিয়ে গঠিত ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম ও বারোগ্রাম বালু নদী মোর্চা যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করছে।
উৎসবের প্রথম দিন শুক্রবার বেলা ৩টায় ইটাখোলা এলাকায় বালু নদীতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হবে। এই বাইচে ৪০টির মতো নৌকাসহ বালু, শীতলক্ষ্যা, দেবধোলাই ও নড়াই নদী তীরের জনগণ অংশ নিবে।
আরো জানানো হয়, বালু নদী উৎসবের মূল সমাবেশ ও আলোচনা অনুষ্ঠান শনিবার বেলা ১১টায় শুরু হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিবেন। এরপর বেলা দুইটায় লাঠি খেলা ও নারীদের জন্য বালিশ নিক্ষেপ খেলা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩টায় ভবিষ্যত পরিক্রমা ও পুরস্কার বিতরণী এবং বিকেল ৪টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে।
উৎসবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মানুষের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন দূষণ কার্যক্রমে নদী আজ নর্দমায় পরিণত হয়েছে। তাই দূষণকারীদের হাত থেকে নড়াই, দেবধোলাই ও বালু নদীকে রক্ষার জন্য নদীপাড়ের জনগণ ও নাগরিক সংগঠনসমূহকে সম্পৃক্ত করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এতে নদী দূষণ প্রতিরোধে নীতি নির্ধারক, সরকারী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, যুবক, তরুণ, গনমাধ্যমকর্মী, স্থানীয় সংগঠনসমূহ এবং নদীপাড়ের সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া এরমাধ্যমে নদীদূষণ বিষয়টি মূলধারার নীতিনির্ধারণী আলোচনায় স্থান পাবে এবং পরিবেশ ন্যায়বিচার ও নদীদূষণের রাজনৈতিক পরিণতিকে সামনে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ