মিসরে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনার ফলাফল নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বিপদাপন্ন দেশগুলোর নাগরিক সমাজ। সম্মেলনস্থলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ক্ষয়-ক্ষতি পূরণে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যাপারে দূষণকারী ধনী দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
আজ শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ‘স্বল্পোন্নত দেশ ও অতি বিপদাপন্ন দেশের মানুষ এবং কপ-২৭ থেকে প্রত্যাশা’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষে ইক্যুইটিবিডির আমিনুল হক মূলবক্তব্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন খুলনা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপু, কুয়েটের অধ্যাপক ড. মোস্তফা সারওয়ার, ভারতের অশোকা রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো সৌম্য দত্ত, নেপালের ডিগবিকাস ইনস্টিটিউটের প্রয়াশ অধিকারী, অ্যাওসেডের নির্বাহী পরিচালক শামীম আরেফিন, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের সামাহ হাদিদ, প্ল্যাটফর্ম অব ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্টের সচিবালয় প্রধান অ্যাটল সোলবার্গ প্রমুখ।
মূলবক্তব্যে আমিনুল হক বলেন, “জলবায়ু আলোচনা শেষ হতে চললেও এখনো ইউএনএফসিসিসি মূল বিষয়গুলো নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি। প্রাথমিক খসড়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে রাখা এবং ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ বিষয়গুলো এখনো ব্র্যাকেটের মধ্যে রাখা হয়েছে। ব্র্যাকেটের মধ্যে রাখার মানে হলো এসব বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। ” এমতাবস্থায় তিনি নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো―২০৫০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার ধ্বংসাত্মক টালবাহানা বন্ধ করতে হবে এবং প্রতিশ্রুতি পূরণে তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো বিলম্ব ছাড়াই এবং কপ-২৭ আলোচনাতেই ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ক অর্থায়নের বিষয়ে ঘোষণা করতে হবে। বিভিন্ন দেশের বাস্তবতা বিবেচনা করে ইউএনএফসিসি কনভেনশনের আলোকে গ্লোবাল গোল অন এডাপটেশন প্রণয়ন ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে খুলনার প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপু জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি জিজিএর ওপর একটি বিস্তারিত কাঠামো তৈরির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ধনী-দরিদ্র প্রায় সব দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভিযোজন কৌশল গ্রহণে বাধ্য। ’
ড. মোস্তফা সারওয়ার ধনী দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন, ‘ধনী দেশগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশমন ও অভিযোজনে বিলম্বিত পদক্ষেপ অতি বিপন্ন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষতি ও বোঝা বাড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ জন্য খরচও বাড়িয়েছে। তাই ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে এবং ক্ষতিপূরণে ধনী দেশগুলোর আর কোনো বিলম্ব করা উচিত নয়, এই কপ থেকেই সিদ্ধান্ত আসতে হবে। ’
ভারতের সৌম্য দত্ত জানান, ‘নেট-জিরো’ উদ্যোগটি বড় দূষণকারী দেশগুলোর সরকারি ও বেসরকারি খাতের জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে বিদ্যমান অব্যাহত বিনিয়োগের সাথে সম্পূর্ণরূপে বেমানান। যা জলবায়ু অর্থায়নের নামে এবং কার্বন বিপণন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দরিদ্র এবং অতি বিপন্ন দেশগুলোর মানুষের ঋণের বোঝা বাড়াবে। তাই সংশ্লিষ্ট সব দেশকে এ ধরনের ‘নেট জিরো নির্গমন’ প্রকল্প বন্ধ করে বরং যত দ্রুত সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার আগে বন্ধ করে এই নেট জিরো লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
নেপালের প্রয়াশ অধিকারী বলেন, কপে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে রাখার বিষয়ে ঐকমত্য হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো তাদের ভূরাজনৈতিক দাবা খেলায় ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যকে রাজনৈতিক গুটি হিসেবে ব্যবহার করছে। ব্রাজিল এ বিষয়ে কোনো সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করছে। এমনকি অনেক দেশ ১.৫ ডিগ্রির বিষয়টি আলোচনার বাইরে রাখার চেষ্টা করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ