এক সপ্তাহ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সপ্তাহে আবার দরপতন হয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এরপরও বাজার মূলধনে বড় উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন আড়াই লাখ কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। বাজার মূলধনের এমন উত্থানে ভূমিকা রেখেছে সরকারি সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ড।
গত সপ্তাহের সোমবার (১০ অক্টোবর) থেকে দেশের শেয়ারবাজারে প্রথমবারের মতো ২৫০টি ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এ ট্রেজারি বন্ডগুলোর বাজার মূলধন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিএসইর বাজার মূলধন ৩ লাখ কোটি টাকার ওপরে বেড়ে যায়।
এদিকে, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। মূলত ট্রেজারি বন্ডের বাজার মূলধন যোগ হওয়ার কারণে এ বাজার মূলধন বেড়েছে।
বাজার মূলধন বাড়লেও গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ১০১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৮টির। আর ১৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৫ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৫৬ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৫৩ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
প্রধান ও ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ২৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৬৭ শতাংশ।
সবকটি সূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২০৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা বা ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৮৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৫ হাজার ২৭৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে হাজার ৪৪৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪২৩ কোটি ৭১ লাখ ২৭ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। ২১৬ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোনালী পেপার, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, ওরিয়ন ইনফিউশন, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ