জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মানিক যখন ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করেছিল, সেখানে অধ্যয়নরত মেয়েদের ভার্জিনিটি নিয়ে দেশের অনেক মানুষ প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছিল। তখন নেট সুবিধা না থাকলেও, পত্র পত্রিকা আর চায়ের আড্ডাগুলো, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়তে আসা মেয়েদের চরিত্র নিয়ে সংশয় প্রকাশ এবং প্রশ্ন উত্থাপনের চেষ্টা করেছে।
অথচ, জরুরী ছিল এইসব কুলাঙ্গারগুলো যেন আর মুখ দেখানোর সুযোগ না পায়, তাদের উত্তরসূরী তৈরী হতে না পারে তার পথ বন্ধ করা। এইতো সেদিনের কথা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন রাজনৈতিক নারী নেতৃত্বের সংঘর্ষ নিয়ে সমালোচনা তুঙ্গে, তখনও রাজনৈতিক মেয়েদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থী মেয়েদের ভার্জিনিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
যারা এই সমালোচনাগুলো নেহায়েত সমালোচনার জন্য করেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন, নিজের পরিবারের কোনো মেয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানে পড়ে, এমন অবস্থায় এ ধরনের কথা শুনলে আপনার কেমন লাগবে?
ইদানিং ‘ ইডেন মহিলা কলেজ ‘ নিয়ে সবাই খুব সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছেন। ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে যুক্ত মেয়েদের , অপকর্ম নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে, সেই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষার্থী এমনকি সমস্ত শিক্ষকদের চরিত্র হনন করতেও অনেকে পিছপা হচ্ছেন না। এটা খুব অন্যায়। যাদের জন্য শিক্ষাঙ্গন কলুষিত হচ্ছে , তাদের বহিস্কারের কথা বলুন। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলতে পারেন।
টোটাল একটা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সমালোচনা করে, সেখানে ” নারী শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ নেই ,” একথা বলে নারীদের শিক্ষা গ্রহণ থেকে দূরে রাখতে চান? তাতে কি কোনো লাভ হবে? আমাদের এই সমাজটা আরো পিছিয়ে পড়বে।
যেসব মেয়েরা রাজনৈতিক ভাবে হলে উঠে , শুধু মাত্র তাদের ব্ল্যাক মেইল করার সুযোগ পায় নেত্রীরা। কলেজ প্রশাসনের দুর্বলতা হলো , তারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেত্রীদের সমঝে চলে। একটা স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে মন্তব্য করার আগে ভেবে চিন্তে করা উচিত।
গুটি কয়েক মেয়ের নষ্টামির জন্য পুরো প্রতিষ্ঠান কখনো দায়ী হতে পারে না। তাহলে ওখানে কোনও ভাল পরিবারের মেয়েরা প্রতিযোগীতা করে পড়তে যেত না। মনে রাখবেন , এত বড় একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার মেয়ে পড়তে আসে। যাদের অধিকাংশই কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত থাকে না। এরাই কোনো অন্যায় দেখলে বুক পেতে দিয়ে রুখে দাঁড়ায়।
আমি নিজে ইডেনের ছাত্রী ছিলাম। আমার সহপাঠীরা পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসের ত্রিশটি গাছ , প্রিন্সিপাল ম্যাডাম টেন্ডার দিয়ে বিক্রি করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। কাঠুরে হাতিয়ার নিয়ে গাছ কাটতে গেলে একেকজন গাছের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
পত্রিকায় লেখালেখি করে বিভাগীয় প্রধানের বকা হজম করেছি। শেষে যখন মিডিয়ায় অনেক বেশী ফোকাস হয়েছিল , অধ্যক্ষ আয়েশা আপা টেন্ডার বাতিল করতে বাধ্য হন। তার প্রমোশন আটকে গিয়েছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি পদে যোগদান পিছিয়ে গিয়েছিল। এটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন ছিল । আপা আমাদের টিসি দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ।
কিন্তু , আমরা যখন পরীক্ষার আগে তার দোয়া চাইতে গিয়েছিলাম , আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিয়েছেন ।
তাই বলব, মুদ্রার এক পিঠ দিয়ে এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে, এর ভেতরের পরিবেশটা কলুষমুক্ত করার জন্য সহযোগিতা করুন। এটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক ।
বাংলা৭১নিউজ/সুত্র : লেখকের ফেইসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত