পারকি সমুদ্রসৈকত। তুমুল বেগে বইছে বাতাস, উত্তাল সমুদ্র, তীরে একের পর এক আঁচড়ে পড়ছে ঢেউ। নেই মানুষের কোলাহল। শুধু শোনা যাচ্ছে সাগরের গর্জন। সৈকতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ঝাউগাছগুলো এখন আর দেখা যায় না। বছর দশেক আগেও যেখানে হাজার হাজার ঝাউগাছ দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে আজ নামমাত্র কিছু গাছের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।
তাও বিলুপ্তির মুখে। পর্যটকদের পদচারণাও খুব কম। পারকি সৈকত ঘুরে দেখা যায়, যে ঝাউ গাছগুলোকে কেন্দ্র করে এই সৈকত গড়ে উঠেছে সেই ঝাউগাছগুলোর অস্তিত্ব বিলীনের পথে। শিকড় থেকে মাটি সরে সৈকতের বেশির ভাগ ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। সৈকতের বালিতে লুটিয়ে আছে অনেক ঝাউগাছ। যার ফলে চলাচলে অসুবিধা হওয়াসহ বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
স্থানীয় ফরিদ নামের এক যুবক জানান, ছোটবেলা থেকে এই ঝাউবন দেখে আসছি। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে বন্যা, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়, বালি উত্তোলন, ক্রিস্টল গোল্ড জাহাজের অবস্থান সব মিলিয়ে পারকির প্রাকৃতিক পরিবেশ দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ঝাউগাছগুলো এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পারকি বিচ পরিচালনা কমিটির সদস্য এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় অনেকবার আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।
বন বিভাগের কাছেও অনেকবার চিঠি দিয়েছি; তবে কোনো সাড়া পাইনি। এখানে নামকাওয়াস্তে বনপ্রহরী আছে। কিন্তু রাতের বেলায় গাছ কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পারকি বিচ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি বন বিভাগকে অবহিত করব।
কীভাবে এই ঝাউগাছগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির (বাপউস) সভাপতি এ কে এম আবু ইউছুফ বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা পর্যটন এলাকাগুলো আমাদের সম্পদ। এর ব্যবহারে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে।
কোনোভাবে যাতে পরিবেশ দূষণ না হয়, সে ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় দূষণের ফলে পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান প্রাকৃতিক কারণে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ঝাউগাছের শিকড় থেকে বালি সরে গেলে গাছ উপড়ে পড়ে যায়। মূলত এটা প্রাকৃতিক কারণে হচ্ছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে তিনি জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের। জেলা বা উপজেলা প্রশাসন সুনির্দিষ্টভাবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। পারকি সৈকত ঘুরে জানা গেল আগে সারা সপ্তাহ পর্যটকের ভিড় লেগে থাকত। এখন সেরকমভাবে পর্যটক আসেন না।
পর্যটক না থাকায় ফটোগ্রাফারদের দলবেঁধে সৈকতের আড্ডা দিতে দেখা যায়। সৈকতে গাছের সঙ্গে ঘোড়া বেঁধে রেখে বিশ্রাম করছিলেন ঘোড়াওয়ালা কামরুল। তিনি বললেন, আমার ঘোড়ার নাম মধু। আমি পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে উপার্জন করি। আমার মতো অনেকেই আছেন। ঈদ মৌসুমে কিছু আয় হলেও এখন সারা দিনেও ১০০/২০০ টাকা পাই না।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ