বাংলা৭১নিউজ, ভোলা: ভোলায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে নদীর জোয়ার-ভাটায় ভাসমান মাছ চাষ। নতুন এই পদ্ধতি দেখে স্থানীয় বেকার যুবক ও ভূমিহীন মৎস্যজীবীরা নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহী হয়। ইতিমধ্যে সদর উপজেলার তেতুলীয়া নদীতে ২০ যুবক এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছে। সফলতা পেতে দিন-রাত কাজ করছেন তারা। পুকুরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হারে নদীতে মাছ বাড়ার পাশাপাশি স্বাদও হয় বেশি। এছাড়া মাছের রোগ বালাইও হয় না বললে চলে। তাই নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছে ভোলার চাষীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার খেয়াঘাট সংলগ্ন ভেদুরিয়া ইউনিয়নের তেতুলীয়া নদীতে ভাসছে সারি সারি মাছের খাঁচা। ড্রামের ওপর লোহার পাইপ ও জাল দিয়ে তৈরি এসব খাঁচায় চাষ হচ্ছে মনোসেক্স তেলাপিয়া।
এ সময় মৎস্য চাষীরা জানান, ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দুই লাখ টাকা অনুদান পেয়ে কয়েক যুবক ভোলায় প্রথম খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। পরবর্তীতে মাছ চাষের নতুন এই পদ্ধতি দেখে চরসামাইয়া গ্রামের ২০ বেকার যুবক নিজস্ব উদ্যোগে নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করে। নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করে ড্রামের ওপর লোহার পাইপ, বাঁশ ও জাল দিয়ে তারা তেতুলীয়া নদীর ওপর ২০টি খাঁচা তৈরি করেন। সেই খাঁচায় চাষ করছে মনোসেক্স তেলাপিয়া। প্রথম পর্যায়ে ২০টি খাঁচা দিয়ে শুরু করলেও এখন তাদের খাচার সংখ্যা ৭০টি। এতে ব্যায় হয় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। পোনা ছাড়ার দুই মাস পর মাছের ওজন ও মাছে কোনো রোগ-বালাই দেখা না দেওয়ায় প্রতিটি খাঁচায় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা লাভের আশা করছে তারা।
এ সময় কথা হয় মাছ চাষী সজিব, শাজাহা, ইউসুফ ও সজিবের সাথে। তারা জানান, তারা ৮/১০ জন বন্ধু মিলে কি কাজ করবেন তা ভাবছিলেন। এ সময় পত্রিকায় ও টেলিভিশনে খাঁচায় মাছ চাষের সংবাদ দেখে আগ্রহী হন। সেই থেকে শুরু।
তারা বলেন, যাদের মাছ চাষের জন্য জলা নেই তাদের জন্য এই পদ্ধতি সময় উপযোগী। পুকুরে যে হারে মাছ বাড়ে তার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হারে নদীতে মাছ বাড়ার পাশাপাশি রোগ বালাই হয় না বল্লেই চলে।
অপর মাছ চাষী সবুজ, নোমান, আসলাম ও জিকু জানান, খাঁচায় মাছ চাষে উদ্যোগী বেকার যুবকদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে এই পদ্ধতি আরো প্রসার লাভ করবে। পাশাপাশি এতে বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে।
ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানালেন, স্বল্প পুঁজি নিয়ে খাঁচায় মাছ চাষ করা যায় বলে ইতিমধ্যে ভোলার মানুষজনের কাছে এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর জন্য নিজস্ব কোনো জলাভূমির প্রয়োজন হয় না।
অনেকেই আমাদের কাছে এ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আসছে। প্রশিক্ষণ নিতে চাচ্ছে। আমরাও তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করছি। যে কেউ এই পদ্ধতিতে নদীতে মাছ চাষ করে তাদের আর্ত-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারবে বলেও জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস