বাংলা৭১নিউজ, নাটোর: বর্তমান সরকার ৫টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে। এর ফলে গত বারের চেয়ে নাটোরের বিভিন্ন মাঠে চলতি মৌসুমে পাট আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর পাটের বাম্পার ফলন ও বাজারে বর্তমানে ভাল দাম থাকায় পাটের সোলানী দিন ফিরে পাওয়ার স্বপ্নে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
প্রতি বছর কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে পাট উৎপাদন করে। পাট উৎপাদনে জমি চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, রৌদ্রে শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। তারপরও এবার অতি বৃষ্টির কারণে নদী, খাল-বিলে পানি থাকায় পাট জাগ দিতে নেই বাড়তি খরচ।
এছাড়াও অতিরিক্ত পানি পাওয়ায় পাটের রং ভালো হওয়ার ফলে বাজারে পাটের দামও ভালো পাচ্ছেন। বাজার এমন স্থিতিশীল থাকলে এবার পাটে কৃষকরা লাভবান হবেন।
এদিকে কৃষকদের মধ্যে পাট চাষে আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন কৃষি বিভাগ। পাট চাষীদের উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে বাজারে দামের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে স্থানীয় মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের সিন্ডিকেট বন্ধ করে পাট চাষীদের স্বপ্নভঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষকদের।
নাটোরের হালতি বিল, চলনবিলসহ বিভিন্ন মাঠে কৃষকরা পাট কাটা, জাগ দিয়ে পচানো ও পাটকাঠি থেকে সোনালী আঁশ ছড়ানো কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার প্রায় সব এলাকাতে এ বছর পাটের বাম্পার ফলনও হয়েছে। বাজারে ভাল দাম থাকায় কৃষকদের মুখে এবার হাসি ফুটেছে। অনেকেই আবার সোলানী দিন ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
হালতি বিলের কৃষক ইউনুস আলী, রাজু আহমেদ, ফারুক হোসেন, আসাদ আলীসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, এবার অন্য বছরের তুলনায় আবওহাওয়া অনুকূল থাকায় পাটের ফলন ভাল হয়েছে। পাট কাটা, পাটের আঁশ ছড়ানো প্রতি শ্রমিক গত বার ২৫০-৩০০ টাকা মজুরি দিতে হত। কিন্তু এবার তা বেড়ে ৪৫০ টাকা থেকে ৫শ টাকা মজুরি গুণতে হচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে তারা জানান, এ বছর এক সাথে সব জায়গায় পাট কাটা শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকট হয়েছে। তবে বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ ভালো পাটের দাম ১ হাজার ৬শ টাকা থেকে ১ হাজার ৮শ টাকা থাকায় তাদের কিছুটা লাভ হচ্ছে।
তেঘড়িয়া গ্রামের কৃষক সিদ্দিকুর রহমান জানান, এক বিঘা জমিতে চাষ দিয়ে জমি প্রস্তত করা থেকে শুরু করে পাট কাটা পর্যন্ত মোট ৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আর এক বিঘা জমিতে খুব ভাল পাট হলে মোট ১২ থেকে ১৪ মন পাট হয়। যদি বাজার মূল্য স্থিতিশীল থাকে তাহলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মওসুমে নাটোর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৩ হাজার ৮০০ হেক্টর। পাটের চাষ হয়েছে ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ফলন হয়েছে খুবই ভালো। সরকার ৫টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। সে কারণে লাভের আশায় কৃষকরা গতবারের চেয়ে এবার পাটের আবাদ বৃদ্ধি করেছে।
চলতি বছরে পাটের আবাদ করে লাভের মুখ দেখলে আগামীতে পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে মনে করেন কৃষি বিভাগ।
এছাড়া উন্নত মানের পাট উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাট কাটা প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সম্পন্ন হয়েছে। এবার পানির অভাব না থাকায় পাট জাগ দিতে কোনো সমস্যা নাই। ফলে পাটের রং ভালো হচ্ছে। বাজারে পাটের দাম ভালো থাকায় এবার চাষিরা বেশ খুশি।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস