বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র (বিএনএসকে) প্রবর্তিত ‘শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সাহসী সাংবাদিকতা পদক’ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে পাওয়া একমাত্র নারী ছিলেন সেলিনা পারভীন। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আগামী প্রজন্মের কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে তাঁকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনএসকে’র সভাপতি নাজমুন আর হক মিনু।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যক্ষ মাহফুজা খানম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সেলিনা পারভীনের পুত্রবধূ কাজী রাকসিন্দা জাবীন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, সমাজে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ নারী হওয়ার পরও সর্বস্তরে তাদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে পাই না। তাদের শ্রমের বিনিময়ে সমাজ-সংসার গড়ে তোলার স্বীকৃতি দেখি না। তাদের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন হয় না। তার পরও সাংবাদিকতায় নারীরা এগিয়ে আসছেন। তবে সংখ্যায় খুব বেশি নয়। গণমাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো নারীদের প্রতিনিধিত্ব নেই। এটা যুগ যুগ ধরে মেনে আসছি। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। সেলিনা পারভীনের মতো সাহস নিয়ে নারীদের এই পেশায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যক্ষ মাহফুজা খানম বলেন, নারীরা এখনো পুরুষের কয়েক পা পেছনে বা তাদের অধস্তন রয়ে গেছে। তারা এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রতিদিনই সংগ্রাম করছে। এটা যুগে যুগে, শতাব্দীতে শতাব্দীতে হয়েছে। আজকের আধুনিক বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, নারীদের একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে। নারীসমাজও সেই জায়গাটি পেতে তার শ্রম, মেধা, মনন দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, সেলিনা পারভীনকে সরকারিভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়নি। এ জন্য নারী সাংবাদিক কেন্দ্র যে পদক দিচ্ছে, সেটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সে জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
সভাপতির বক্তব্যে নাসিমুন আরা হক মিডিয়া হাউসগুলাতে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি ও কাজের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যৌন হয়রানি সংক্রান্ত ঘটনা রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি মিডিয়া হাউসে যৌন নিপীড়ন নিরোধ কমিটি থাকতে হবে। যাতে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটলে সুষ্ঠুভাবে তা বের করে আনা সম্ভব হয়। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের স্বার্থে আলাদা আচরণবিধি ও নীতিমালা নির্ধারণের তাগিদ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিজয়ী দুজনকে পদক ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। তারা হলেন একাত্তর টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কাবেরী মৈত্র (২০২০ সাল) ও দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ সংবাদদাতা রোজিনা ইসলাম (২০২১ সাল)।
শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাপ্তাহিক বেগম, ললনা, শিলালিপিসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে হত্যা করে। এর আগের দিন আলবদর বাহিনী সেলিনা পারভীনকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর মিরপুর বধ্যভূমিতে তাঁর মরদেহ শনাক্ত এবং ১৮ ডিসেম্বর আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ