বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দেশের ইতিহাসে প্রথম গোয়েন্দা জাহাজ উন্মোচন করল ইরান প্রাথমিকে শিক্ষক বদলি শুরু, চলবে মার্চ পর্যন্ত ক্যান্সার আক্রান্ত গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়ার বিধান বাতিলের প্রস্তাব ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু তাবলিগ জামাতের সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা বান্দরবানে ৭ শ্রমিককে অপহরণ আলোচিত নারী উদ্যোক্তা তনির স্বামী মারা গেছেন পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে কাজ করছে সরকার: আইজিপি জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর প্রয়োজনীয় সংস্কার বছরের মাঝামাঝিতে শেষ হবে না: সারজিস আলম হত্যাচেষ্টা মামলায় সালমান ও পলক ফের রিমান্ডে ১২ জেলায় রেজিস্ট্রার বদলির প্রস্তাব অনুমোদন ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের ১২ বছরের কারাদণ্ড পুলিশ পরিচয়ে আ’লীগ কর্মীকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা সিরিয়া সীমান্তে কুর্দিদের নিয়ে তুরস্কের উদ্বেগ বৈধ: যুক্তরাষ্ট্র প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দিল ৪ কমিশন টিউলিপের পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল অবশেষে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন টিউলিপ সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নামে প্রথম মামলা

গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি অবণতি

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ১২ জুলাই, ২০১৭
  • ১১৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, রবিউল কবির মনু, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধায় ক্রমাগত নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বিদ্যালয়ের মাঠ ও রাস্তাঘাট পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের নি¤œ আয়ের মানুষরা। কোথাও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে না গেলেও নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে নদীর নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলের এলাকাগুলো।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি গাাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়া করতোয়া ও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩ দশমিক ০০ মিলিমিটার।
সম্প্রতি ব্রক্ষপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের সিংড়িয়া থেকে কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের কেতকিরহাট ও কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ব্রক্ষপুত্র নদ সংলগ্ন বালাসীঘাট, কাইয়ারহাট, খালাইহারা, খোলাবাড়ি ও কেতকিরহাট এবং সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের মিয়াপাড়া, পূর্বকোমরনই, ঘাগোয়া ইউনিয়নের হাতিয়া, ভাটিয়াপাড়া, তালতলা, পঁচারকুঁড়া, গিদারী ইউনিয়নের আনালের ছড়া, ধুতিচোরা ও কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাটসহ নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব এলাকার বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তাঘাট ও ফসলী জমি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বৃষ্টি ও পানির ¯্রােতে অনেক জায়গায় কাঁচা রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। ফলে যানবাহনের সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক স্থানে মানুষ টানা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছে। ঘরে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে। মুলমুত্র ত্যাগে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গোয়ালঘরে পানি ওঠায় গবাদিপশু বাড়ি সংলগ্ন উঁচু স্থানে রাখা হয়েছে। টিউবওয়লের গোড়ায় পানি জমেছে। ডায়রিয়াসহ পেটের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।চরাঞ্চলে পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন উঁচু স্থানে।

Gaibandha Photo 01

কাইয়ারহাট গ্রামের কলেজছাত্র শাহজাহান কবির বলেন, বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তাঘাটে পানি ওঠায় সমস্যা বেড়েছে। ছোট ছেলে-মেয়েদের সবসময় চোখেচোখে রাখতে হচ্ছে। কেউ কেউ এখন থেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে। পানি এখনও বাড়ছে। হাতিয়া ও ধুতিচোরা গ্রামের সাজু মিয়া (৩৮) ও আব্দুল আউয়াল (৪২) বলেন, বন্যার পানিতে চারদিন থেকে রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে । চলাচলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বাড়ির আশেপাশে সাপসহ বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হয় বাঁধে আশ্রয় নিতে হবে। কামারজানি চরের সেলিম মিয়া (৫২) বলেন, চরে ঘর ছিল। সে ঘরে এখন পানি হাটুর উপরে। তাই ঘর ভেঙ্গে নিয়ে এসেছি। প্রতিবছর বন্যায় চরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তাই ডাকাত আতঙ্কে রয়েছে চরাঞ্চলের মানুষরা।
এ ছাড়া জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদী তীরবর্তী ১৬টি ইউনিয়নের ১৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নি¤œাঞ্চলের অনেক নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে মানুষদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মানুষ নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু স্থানগুলোতে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বন্যার্ত এলাকার মানুষদের আরও দুর্ভোগ বেড়েছে। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, বন্যায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ধানের বীজতলা, শাক-সবজি, পাটক্ষেতসহ ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। এবার ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে ধানের চারার কোন সমস্যা হবে না।
গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. মো. আমির আলী বলেন, আমাদের প্রায় ১ হাজার জনের ১২০ টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বন্যা দুর্গত এলাকায় কাজ করছে। কন্ট্রোল রুম খোলার কাজ চলছে। এ ছাড়া খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রয়েছে। আরও চাহিদা চাওয়া হয়েছে। দুইএকদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।
বন্যাদুর্গত সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুধবার সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হবে। বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে কার্বোলিক এসিডের বোতলের মুখ খুলে ঘরের আশেপাশে রাখতে হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম মন্ডল বলেন, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ৩৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষে পানি উঠেছে। এ ছাড়া আরও ৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে বিদ্যালয়গুলোকে খুলে দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে।

Gaibandha Photo 03

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইদ্রিশ আলী বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯০ মেট্রিকটন চাল ও ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চার উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ১৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত শনিবার ও রোববার পানি স্থির থাকলেও সোমবার সকাল থেকেই নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া শহর রক্ষা বাঁধ পাহাড়া দেওয়ার জন্য পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরা কাজ করবে। অন্যান্য বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন পাহাড়া দিচ্ছে। যেখানে সমস্যা মনে হচ্ছে সেখানে জরুরীভাবে কাজ করা হচ্ছে।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, বন্যার সময় চরাঞ্চলগুলোতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তাই নদী তীরবর্তী চারটি উপজেলায় আটটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক নদীতে টহল দিচ্ছে। এ ছাড়া জরুরী মুহুর্তে জেলা পুলিশের ৩টি স্পিডবোট ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, পানি বৃদ্ধি পেলে মানুষদের নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে চাল, ডাল, শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ রয়েছে। আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। ত্রাণ বিতরণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com