হ্রদ-পাহাড়ের সবুজ পর্যটন নগরী রাঙামাটি প্রস্তুত হয়ে বসে আছে আসন্ন ঈদের ছুটিতে জেলায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের বরণে। কভিডকাল ভুলে ফের ঘরছাড়া ভ্রমণপিয়াসী মানুষের ভিড়ে এবার বেশ মুখর হবে শহর- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন জেলার পর্যটন ব্যবসাসংশ্লিষ্টরা। তাই বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে কেউ কেউ হোটেলের পুনসংস্কার করছেন, বাড়াচ্ছেন চাকচিক্য। এ কাজে শুধু যে হোটেলগুলোই মনোনিবেশ করেছে, এমন নয়।
পিছিয়ে নেই হ্রদে চলাচলকারী ইঞ্জিনচালিত ট্যুরিস্ট বোটগুলোও। বোটের সংস্কার, ইঞ্জিন মেরামত, লাইফ জ্যাকেট পরিচ্ছন্ন করা কিংবা বোটের গায়ে নতুন রঙের প্রলেপ দেওয়ার কাজ সেরে নিচ্ছেন চালকরা। মোটেলগুলোর অগ্রিম বুকিং-ও বেশ আশাপ্রদ।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন এর ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ‘আমার মোটেল-কটেজে ৮৮টি রুম, এগুলোতে দেড়শতাধিক পর্যটক অনায়াসেই থাকতে পারে। এর মধ্যে ৪৪টি এর মধ্যেই বুকিং হয়ে গেছে, বাকিগুলোও এ সপ্তাহের মধ্যেই বুকিং হয়ে যাবে বলে আশা করছি। বছরের এ সময়টার জন্য আমরা এমনিতেই প্রস্তুত থাকি, এ বছরও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। টানা ছুটির কারণে বিপুলসংখ্যক পর্যটক এবার জেলায় আসবে বলেই মনে হচ্ছে। ‘
শহরের নতুন আবাসিক হোটেল স্কয়ার পার্ক এর স্বত্বাধিকারী নেয়াজ আহমেদ বলছেন, ‘আমার হোটেলে যে রুম আছে তার মধ্যে ৬৫টি আমি চালু করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৩০টি রুম এর মধ্যেই আগাম বুকিং হয়ে গেছে, বাকিগুলোও দ্রুতই হয়ে যাবে। আমি হোটেল নতুন করে রঙ করিয়েছি, বেডশিট-পর্দা-তোয়ালে বদলেছি। হোটেল ডেকোরেশনেও কিছু পরিবর্তন এনেছি। আমি খুবই আশাবাদী, এ কদিনের ব্যবসা নিশ্চিতভাবেই ভালো হবে। ‘
রাঙামাটি আসাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন সেলিম। তিনি জানালেন, শহরে আমাদের ৫৩টি আবাসিক হোটেল আছে। এ হোটেলগুলো প্রায় ৫ হাজার বোর্ডার রাখার সক্ষমতা আছে। করোনাকালের কঠিন সময়ে হোটেলগুলো দুঃসহ সময় পার করেছে, অনেকেই হোটেল বন্ধও রেখেছে। আশা করছি, এ মৌসুমে সবাই ঘুরে দাঁড়াবে। সবাই সেই প্রস্তুতিই নিয়ে রাখছে। ‘
রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম প্রধান কাজ যেন কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার। কেউ-বা দূরের সুবলং এর জলপ্রপাতে স্বস্তি খোঁজেন, কেউ-বা হ্রদের নীল জলে ডুব দিয়ে বা ভেসে বেড়িয়ে খোঁজেন তৃপ্তি। আর এই কাজে নিয়োজিত জেলার প্রায় ৫০০ ইজ্ঞিনচালিত বোট। সবচে’ বেশি বোট মেলে বিখ্যাত ঝুলন্ত সেতুর পাড়ের ঘাটেই।
এ ঘাটের ব্যবস্থাপক রমজান আলী জানান, এর মধ্যেই বেশির ভাগ বোটই নিজেদের প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সেরে নিয়েছে। কেউ রঙ করেছে, কেউ সিট বা সিটের গদি বদলেছে। অনেকেই লাইফ জ্যাকেট কিনেছে নতুন করে কিংবা ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে নিয়েছে। সবমিলিয়ে প্রস্তুতি আছেই কমবেশি সবার। ‘
পর্যটন ঘাট ছাড়াও তবলছড়ি বাজার ঘাট, রিজার্ভ বাজারের লঞ্চঘাট, মসজিদঘাট, উন্নয়ন বোর্ড ঘাট, বনরূপার সমতা ঘাট ও শিল্পকলা একাডেমি ঘাট থেকেও ছাড়ে হ্রদমুখী নৌযানগুলো। সবখানেই প্রস্তুতি প্রায় একই রকম, জানালেন রমজান।
শুধু রাঙামাটি শহরই নয়, দূর পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পর্বতকন্যা সাজেক। সেখানেও দীর্ঘসময়ের পর্যটকখরা কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সব আয়োজনই প্রায় শেষপর্যায়ে বলে জানান একাধিক কটেজ রিসোর্ট মালিক।
রাইন্যাটুগুন ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ললিত কুমার চাকমা বলেন, আমরা তো করোনায় মোটামুটি শেষ হয়ে গেছি। এখন একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এই ছুটিতে যদি ভালোসংখ্যক পর্যটক আসে, তবে হয়তো কিছুটা অন্তত বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। ‘
বাংলাদেশ ট্যুর গ্রুপের ব্যবস্থপনায় পরিচালিত সাজেক এর লুসাই কটেজ এর তিনটির কোনোটিতেই ঈদের ছুটির দিনগুলোতে কোনো রুমই খালি নেই। কটেজটির ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান জানান, অনেক আগেই আমাদের সবগুলো রুমই বুকড হয়ে গেছে। শুধু আমাদের নয়, এখানকার প্রায় শতাধিক রিসোর্টের সবারই একই অবস্থা। ‘
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেরি লুসাই জানান, আমাদের প্রায় শতাধিক কটেজ আছে। এর বেশির ভাগই বুকিং হয়ে আছে ঈদের ছুটিতে। করোনায় যে ক্ষতি আমাদের হয়েছে তা ধীরে ধীরে মে আসবে বলে মনে করছি। তবে করোনায় সংক্রমণ কমে আসলেও আমরা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ করছি বুকিং এর সময়ই। ‘
শহর রাঙামাটি কিংবা দূরের সাজেক- সর্বত্রই এখন প্রস্তুতিমুখর, পর্যটকবরণে। কভিডকালের ক্ষত সেরে পাহাড়ের পর্যটন আবার ঘুরে দাঁড়াবে স্বরূপে-স্বকীয়তায়, এমন আশাবাদ তাই সবার মুখেই।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ