রাজধানী উত্তরায় নিজ বাসায় ব্যবসায়ী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ (৭৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। নেশার টাকা জোগাড় করতে ও পাওনাদারদের দেনা পরিশোধের জন্য আপন ফুপা শামসুদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করে তানভির আহম্মেদসহ তার দুই সহযোগী। হত্যার পর স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, রাজধানীতে প্রতিনিয়ত অপরাধের ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে। নিকট আত্মীয়রা বাসায় প্রায়শই আসে। ঢাকা শহরে অনেক বাসায় একজনের পরিচয়ে আরও কয়েকজন বাসায় আসে। আত্মীয়ের সঙ্গে অপরিচিত কেউ বাসায় এলে সবাই সাবধানে থাকবেন। প্রতিটি পরিবারের সচেতন থাকা উচিত। নিজের সন্তান কি করছে সবাইকে খোঁজ নেওয়া উচিত।
গত ১৫ মার্চ দুপুরে রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে ৮০ নম্বর বাড়ির পাঁচতলায় নৃশংসভাবে হত্যা করে তারই নিহতের ভাতিজা তানভীরসহ তিনজন। রক্তাক্ত অবস্থায় শামসুদ্দিনকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ। তারা হলেন- মো. মুসলিম (২০), ও মো. আবু সাফি (২৫)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি শাটার গান, ৪ রাউন্ড গুলি, লুণ্ঠিত অলংকার ও নগদ ৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, পাঁচজনের সংসারে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ শামসুদ্দিন সুখে শান্তিতে ছিলেন। তানভীর ছিলেন শামসুদ্দিনের স্ত্রী রাশিদা বেগমের ভাতিজা। গত ১৫ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাশিদার ভাতিজা তানভীরসহ অপরিচিত আরও দুজন আসেন তাদের বাসায়। রান্নাবান্না শেষে নাতনিকে স্কুল থেকে বাসায় আনার জন্য বাইরে যান রাশিদা বেগম। এ সময় বাসায় একা ছিলেন শামসুদ্দিন। এরপর স্কুল থেকে নাতনিকে নিয়ে বাসায় এসে দেখেন রাশিদার স্বামী নিহত শামসুদ্দিন খাটের ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে। হত্যার পর তারা পালিয়ে যায়।
ডিবি প্রধান বলেন, কেন নিজের ফুপাকে গলা কেটে হত্যা করলো তানভীর, মামলার পর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রথমে মুসলিম নামের একজনকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সাফি নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে অস্ত্র, গুলি, কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, তানভীর নেশা করতেন, ঋণগ্রস্তও ছিলেন। গ্রেফতার দুজন ও ভারতে পলাতক তানভীরসহ চারজন মিলে একটি টিম গঠন করে। এমন আরো কত ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমরা এখনো ডিটেক্ট করতে পারিনি। পলাতক তানভীরের ধারণা ছিল তার ফুপুর বাসায় গেলে কয়েক লাখ নগদ টাকা পাওয়া যাবে। এই টাকা দিয়ে সে ঋণ থেকে মুক্ত। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাই নেশাগ্রস্ত হওয়ায় নেশার টাকাও জোগাড়ের একটা ব্যবস্থা হবে বলে মনে করে।
নিকট আত্মীয়রা বাসায় প্রায়শই আসে জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরে অনেক বাসায় একজনের পরিচয়ে আরও কয়েকজন বাসায় আসে। আত্মীয়ের সঙ্গে অপরিচিত কেউ বাসায় এলে সবাই সাবধানে থাকবেন। প্রতিটি পরিবারের সচেতন থাকা উচিত নিজের সন্তান কি করছে সবাইকে খোঁজ নেওয়া উচিত।
নিহতের ছেলে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, তানভীরের পরিবারকে আমার মা প্রচুর সাহায্য করেছে। এখনো অনেক সাপোর্ট করে। আমি যে কারখানায় চাকরি করতাম, সেখানে সেও এক থেকে দেড় বছর চাকরি করতো।
যারা ঘটনার দিন তানভীরের সঙ্গে বাসায় গিয়েছিল তারা কি এর আগেও গিয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামাতো ভাই তার দুই বন্ধুকে বাসায় নিয়ে এসেছে, বাসার সবাই বিষয়টা খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিল। এখানে সন্দেহ করার কোনো কারণ ছিল না। ওরা মনে করেছিল আমাদের বাসায় অনেক স্বর্ণালংকার পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার বাসায় কোনো সোনার গহনা ছিল না।
আত্মীয়তার সম্পর্কে এটা শুধু একটা খুন নয়, বিশ্বাসকে ভঙ্গ করা। পলাতক তানভীরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ওরা ভেবেছিল আমাদের বাসায় অনেক টাকা পয়সা পাবে। কিন্তু পায়নি। এর মধ্যে আমার বাবা বাধা দিতে গেলে প্রথমে মামাতো ভাই বাবাকে আক্রমণ করে। মামাতো ভাই যে গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করত সেখানে সে বিভিন্ন পণ্য চুরি করতো। এই চুরির দায়ে তার চাকরি চলে যায়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ