আল্লাহর নির্দেশে হজরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাওম বনি ইসরাইলের কাছ থেকে একমাসের সময় নিয়ে তুর পাহাড়ে অবস্থান করেন। মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহর নির্দেশে তিনি আরও ১০ দিন সেখানে থাকেন। কিন্তু একমাস পর তিনি ফিরে না আসায় তার কাওমের একজনের তৈরি করা বছুরের উপাসনায় লিপ্ত হয় বনি ইসরাইল। তারপর আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইল জাতির এ শিরকের গুনাহও ক্ষমা করে দেন। কিন্তু কেন তিনি তাদের এ গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন?
আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের এ ঘটনা কোরআনুল কারিমের বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা উদ্দেশ্যে শিরকের গুনাহ ক্ষমা করেন। তার একটি হলো- তাদের নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার শর্তে। আর দ্বিতীয়টি হলো- মুসা আলাইহিস সালামকে দেওয়া শরিয়তের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে সঠিক গ্রহণের শর্তে। এ বিষয়গুলো আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেছেন-
وَ اِذۡ وٰعَدۡنَا مُوۡسٰۤی اَرۡبَعِیۡنَ لَیۡلَۃً ثُمَّ اتَّخَذۡتُمُ الۡعِجۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ وَ اَنۡتُمۡ ظٰلِمُوۡنَ
‘আর যখন আমি মুসাকে চল্লিশ রাতের ওয়াদা দিয়েছিলাম এরপর তোমরা তার যাওয়ার পর বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে, আর তোমরা ছিলে জালিম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৫১)
ثُمَّ عَفَوۡنَا عَنۡکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِکَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
‘তারপর আমি তোমাদেরকে এ সবের (শিরকের) পর ক্ষমা করেছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৫২)
وَ اِذۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ وَ الۡفُرۡقَانَ لَعَلَّکُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ
‘আর যখন আমি মুসাকে কিতাব ও ফুরকান দিয়েছিলাম; যাতে তোমরা হেদায়াতপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৫৩)
কোরআনের উল্লেখিত এ ঘটনাটি ঐ সময়ের যখন ফেরআউন সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার পর; কারো কারো মতে বনি ইসরাইল বংশধররা যখন মিসরে ফিরে এসেছিল; আবার কারো কারো মতে অন্য কোথাও বসবাস করছিল। তখন মুসা আলাইহিস সালামের খেদমতে বনি ইসরাইল সম্প্রদায় আরজ করলো যে, ‘আমরা এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত; যদি আমাদের জন্য কোনো শরিয়ত নির্ধারিত হয়, তবে আমাদের জীবন বিধান হিসেবে আমরা তা গ্রহণ ও বরণ করে নেবো।
মুসা আলাইহিস সালামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা অঙ্গীকার প্রদান করলেন যে, আপনি তুর পর্বতে একমাস পর্যন্ত অবস্থান করে আমার ইবাদাতে নিমগ্ন থাকার পর আপনাকে এক কিতাব দান করবো। মুসা আলাইহিস সালাম তাই করলেন।
এরপর আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালামকে অতিরিক্ত আরও ১০ দিন ইবাদাত করতে নির্দেশ দিলেন। এভাবে চল্লিশ দিন পূর্ণ হলো আর আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালামকে তাওরাত দিলেন।
মুসা আলাইহিস সালাম যখন তুর পর্বতে রইলেন; এদিকে সামেরী নামে এক ব্যক্তি সোনা-রূপা দিয়ে গরুর বাছুরের একটি প্রতিমূর্তি তৈরি করলো এবং তার কাছে পূর্ব থেকে সংরক্ষিত জিবরিল আলাইহিস সালামের ঘোড়ার খুরের তলার কিছু মাটি প্রতিমূর্তির ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়ায় সেটি শব্দ করতে থাকলো। আর বনি ইসরাইল সম্প্রদায় তারই (গরুর বাছুরের) পূজা শুরু করে দিল।’ (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলদের প্রতি সবচেয়ে বড় নেয়ামত এবং অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তাদের মাঝে ফিরে আসলে তারা এ শিরক হতে তাওবা করে। তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এত বড় শিরকের অপরাধ থেকে মুক্তি দান করেন। আয়াতে এ কথাই স্মরণ করে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর কিতাব পওয়ায় বনি ইসরাইল জাতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করায় আল্লাহ তাদের শিরকের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আর এ আসমানি কিতাবের হেদায়েত গ্রহণ করাকে শর্ত করে দেন।
তাওরাত ছিল তাদের জন্য এমন এক কিতাব যা সত্য ও মিথ্যার প্রভেদকারী। যার উপর বনি ইসরাইল ঈমান এনেছিল। এ কিতাবেই শেষ-নবি ও কুরআনের উপর ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে। তাই আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলদেরকে বারবার এ কথারই স্মরণ করে দিচ্ছেন যে, তোমাদের প্রতি দেওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করে আমার নির্দেশ মেনে শেষ নবি ও রাসুল এবং কুরআনের প্রতি ঈমান গ্রহণ করো।
আলোচ্য আয়াতের দিকনির্দেশনা থেকে মুসলিম উম্মাহর শিক্ষার জন্য একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, যদি কেউ শিরকের গুনাহ করে তবে আল্লাহর বিধান মোতাবেক হেদায়াত গ্রহণ করার মাধ্যমে শিরকের গুনাহ থেকে মুক্তির উপায় আছে। যারাই মহান আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে কোরআনের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করবে; আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করবেন। মুসলিম উম্মাহকে তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার শিক্ষাও এসেছে অত্র আয়াতে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ আয়াতের শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা ও বিশ্বাস স্থাপন করার মাধ্যমে শিরকের ভয়াবহ গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ