বোরো মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ডিজেলেই চাষিদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয় ৭০০ টাকারও বেশি। এতে কুড়িগ্রাম জেলার দুই লাখ প্রান্তিক কৃষককে চার কোটিরও বেশি টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। যদিও কৃষি বিভাগের দাবি, নতুন করে বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্র চালু ও অলটারনেটিভ ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাই পদ্ধতি ব্যবহারে উৎপাদন ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এক লাখ ১৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৩৮ হাজারের বেশি ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করে বোরো আবাদ করছেন দুই লাখেরও বেশি প্রান্তিক কৃষক।
কৃষকরা বলছেন, বোরো মৌসুমে গড়ে প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ বার সেচ দিতে হয়। এতে প্রয়োজন হয় ৪৫-৫০ লিটার ডিজেল। এই হিসাবে হেক্টরপ্রতি জমিতে বোরো চাষে ডিজেলের বাড়তি দামে কৃষকের অতিরিক্ত খরচ হবে ৭০০ টাকারও বেশি। এতে পুরো জেলায় কৃষকের বাড়তি খরচ হবে চার কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সরেজমিন রাজারহাট উপজেলার সরলার দোলা এলাকায় দেখা যায়, বোরো চাষে ব্যস্ত কৃষকরা। তবে ডিজেল, সারসহ সব কৃষি উপকরণের বাড়তি দামের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
দেবালয় গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডিজেলসহ সব উপকরণের দাম বাড়ায় এক একর জমিতে বোরো আবাদ করতে গত বছরের চেয়ে অতিরিক্ত প্রায় দুই-তিন হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। ’ একই গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘এবার ডিজেলের মূল্য বাড়ার কারণে প্রতি একরে সেচ খরচ ৪০০ টাকা, ট্রাক্টর দিয়ে চাষে ২০০ টাকা ও মাড়াইয়ে ৩০০ টাকা খরচ বেশি পড়েছে।
সারসহ অন্যান্য উপকরণের মূল্যও চড়া। তাই প্রতি একরে অতিরিক্ত খরচসহ মোট খরচ পড়বে প্রায় ৪২ হাজার টাকা। অথচ ধানের দাম প্রতি মণ ৮০০ টাকা হলে ও একরে ৫০ মণ ফলন হলে ৪০ হাজার টাকার বেশি উঠবে না। তাই এ বছর বোরো চাষে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা। ’
এদিকে চরাঞ্চলে বোরো ক্ষেতে বাড়তি সেচ দিতে হয় বলে তাঁদের সেচ খরচ আরো বেশি পড়বে বলে জানিয়েছেন সেখানকার কৃষকরা। উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চর মশালের চরের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন তিনি। বালুমিশ্রিত জমিতে প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে। প্রতি লিটার ডিজেলে ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন চরের কৃষকরা।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘এরই মধ্যে সেচের পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অনেক কৃষক আবেদন করেছে। দ্রুত সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তা ছাড়া সেচের খরচ কমানোর জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বোরো আবাদে অলটারনেটিভ ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাই পদ্ধতি প্রয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে সেচ খরচ কমবে, বাড়বে উৎপাদন। ’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ