সরকার প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন আইন সম্পর্কে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুরনো পথে হেঁটে নতুন গন্তব্যে পৌঁছনো সম্ভব না। সংসদে সরকারের উদ্যোগে যে আইন পাস হতে যাচ্ছে, এই আইনে যাদেরকে নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন হবে এবং ওই আইনে সার্চ কমিটির যে কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করা হচ্ছে তাতে বর্তমান কে এম নূরুল হুদা কমিশনের মতোই আরেকটি কমিশন হবে। সার্চ কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটির অনুসন্ধানের তেমন সুযোগ থাকছে না।
এ ছাড়া বলা হয়েছে, এই আইন হচ্ছে সরকারের ইচ্ছা পূরণের আইন।
বর্তমানে দেশের সাংবিধানিক পদগুলোতে এবং জাতীয় সংসদের বিরোধী দলে সরকারের অনুগত লোকজনেরই অবস্থান। এ অবস্থায় নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না।
প্রস্তাবিত আইনটি জন-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিয়ে আলোচনা এবং করণীয় নির্ধারণের জন্য নাগরিক সংগঠন সুজন আজ বুধবার সকাল ১১টায় ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহানের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এ বৈঠকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক সিকান্দার খান, আর্টিকেল নাইন্টিনের ফারুক ফয়সল, ডেমোক্রেসি ইন্টার ন্যাশনালের ড. আলিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
গতকাল সুজনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক এ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু তাঁরা ছিলেন না।
বৈঠকে এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ‘দেশে সর্বব্যাপী অবিশ্বাস চলছে। আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছি। রাজনীতি যে সমাধান দিতে পারছে না তা আমরা দেখতে পারছি। আইন করে সে আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না।
এই আইনে নূরুল হুদা কমিশনের মতো আরেকটি কমিশন হবে। আইন না থাকার পরেও অতীতে আবু হেনা কমিশন ও এম এ সাঈদের কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। এখন আইন করে যে সার্চ কমিটি গঠন হচ্ছে সেই কমিটির সুপারিশ পাবলিক করতে হবে। কমিটি যাদের নাম সুপারিশ করবে তা আগে প্রকাশ করতে হবে। ‘
ব্রি. জে. ( অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন তাঁর বক্তব্যে নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানে এ বিষয়ে কী ধরনের আইন আছে তা তুলে ধরে বলেন, ‘ভারতেও এ বিষয়ে আইন করার প্রক্রিয়া চলমান। আমাদের সংবিধানে ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে পরিবর্তন না এলে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বাইরে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে না।
এ ছাড়া আমাদের দেশে দেখতে হবে নিরপেক্ষ বলে যাঁদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে তাঁরা চেয়ারে বসে কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে আইন তা কতটা সাহসের সঙ্গে প্রয়োগ করছেন। জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে কাজ করত হয়। এ জন্য নির্বাচন কমিশনে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে তাঁদের প্রশাসনিক দক্ষতা থাকা দরকার।
বৈঠকে ড. বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন কমিশন গঠনে এ টি এম শামসুল হুদা কমিশনের প্রস্তাবিত আইনের খসড়া, সুজনের খসড়ার সঙ্গে সরকারের উদ্যোগে সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত আইনের তুলনামূলক তথ্য উপস্থাপন করেন। একই সঙ্গে সুজনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত আইনে সংযোজন-বিয়োজনের জন্য ছয় দফা সুপারিশ জানান।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ