ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আমন ধান কাটার পর বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি এখন অনাবাদি থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুষ্ক মৌসুমের ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা, খরা, জলাবদ্ধতা এবং সেচের পানির অভাবে এটা হয়। উপকূলীয় জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশই ভূমিহীন ও দরিদ্র। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কৃষক সারা বছরে এখন বাধ্য হয়ে শুধু বর্ষাকালে আমন ধানের চাষ করছেন। ফলাফল—দক্ষিণাঞ্চলে বিপুলসংখ্যক মানুষ অপুষ্টির শিকার।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় একদল দেশি-বিদেশি গবেষক ২০১৭ সালে দক্ষিণাঞ্চলের মাটির স্বাস্থ্য উদ্ধার এবং লবণাক্ততা প্রতিরোধের কৌশল হিসেবে মুগ ডাল চাষ সম্প্রসারণের ওপর জোর দেন। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU), কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (DAE) ও কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (CSIRO) নামের অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (UWA) ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষুদ্র খামারে লবণসহিষ্ণু গম ও ডাল চাষ পদ্ধতি অন্তর্ভুক্তকরণ’ প্রকল্প হাতে নেয়। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও এতে সহায়তা করছে।
পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বরিশাল বিভাগের বেশ কিছু এলাকার অলবণাক্ত ও কম লবণাক্ত অঞ্চলে বেশ কয়েক বছর ধরেই মুগ ডালের চাষ হচ্ছে। তবে জমিতে লবণাক্ততা বাড়লেই চাষ ব্যাহত হয়। অসময়ে বৃষ্টিও হয়। ফলে স্থানীয় কৃষকরা মুগ চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলায় আয় কমার পাশাপাশি পুষ্টিঘাটতিও বাড়ছিল। উল্লিখিত যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, ডিসেম্বর মাসে আমন তোলার পর জানুয়ারিতে একই জমিতে সিডার মেশিনে মুগ ডালের বীজ বপন করলে ফলন ভালো হয়। এতে মার্চের শেষে প্রথম এবং মে মাসে ঝড়বৃষ্টি শুরুর আগেই দ্বিতীয়বার ৮০ শতাংশ ফসল তোলা সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি মুগ-৬ এবং বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত স্বল্পমেয়াদি বিইউ মুগ-৫ নিয়ে এই গবেষণা করে দেখা গেছে, মাত্র দুই মাসে মুগ ফসলের ৫০ শতাংশেরও বেশি ঘরে তোলা সম্ভব। বাংলাদেশে দানাজাতীয় আর কোনো ফসলে এটা সম্ভব নয়। জানুয়ারি মাসের আর্দ্রতা দিয়েই মুগ ফসল বেড়ে উঠতে পারে, সেচ লাগে না।
এ ছাড়া গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরই মার্চ-এপ্রিল মাসে কোনো না কোনো সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে, যা মুগের জন্য ইতিবাচক। এ ছাড়া মুগের ছেই বা পড (ফল) তোলার পর গাছকে মাটিতে মিশিয়ে দিলে তা পচে জৈব সার হবে, মাটির লবণাক্ততাও কমবে। পুষ্টিকর ও সুস্বাদু মুগ চাষে খরচ কম, দামও ভালো বলে কৃষকেরও লাভ।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক সরেজমিন দেখার পর এই গবেষণার ফলে উৎসাহিত হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের উপপ্রধান ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার গবেষক ড. এম জি নিয়োগী।
বাংলা৭১নিউজ/এবি