দেশের অন্যতম বৃহৎ ধান-চালের মোকাম নওগাঁ। কিন্তু আমনেও যেন সুখ নেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। এখনো বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে চাল। সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁর পাইকারি বাজারে সরু ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা, যা খুচরা বাজারে বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা। নতুন ধানে কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার কথা থাকলেও চিত্র এখন পুরোই উল্টো। দফায় দফায় চালের দাম বেড়েই চলেছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণের। আবারও আশা বোরোর ফসল। তাই চালের দাম কমতে আগামী বোরো ধানের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এ পরিমাণ জমি থেকে চালের উৎপাদন হয় ৮ লাখ ১৮ হাজার ২৩৬ মেট্রিক টন। চিকন জাতের ধানের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৩০ হেক্টর জমিতে। এ পরিমাণ জমি থেকে ধান উৎপাদন ৬ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন এবং চাল ৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন।
জেলার পাইকারি ও পৌর খুচরা চাল বাজার সূত্রে জানা যায়, পাইকারিতে সরু ও মাঝারি ব্রি-২৮ চালের দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ৪৮-৪৯ টাকা, আগে ছিল ৪৫-৪৬ টাকা, ব্রি-২৯ চালের দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ৪৬-৪৭ টাকা, আগে ছিল ৪৪-৪৫ টাকা, মিনিকেট চালের দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ৫৪-৫৫ টাকা, আগে ছিল ৫৩-৫৪ টাকা, নাজিরশাইল বা সম্পা কাটারি এক সিদ্ধ চাল ২-৩ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি ৬২-৬৩ টাকা ও দুই সিদ্ধ চালের দাম প্রতি কেজি ৫৮-৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোটা জাতের স্বর্ণা চালের দাম ৩৯-৪০ টাকা এবং গুটি ৩৮-৩৯ টাকা।
খুচরা বাজারে ৪-৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে ব্রি-২৮ চালের দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ৫২-৫৪ টাকা, ব্রি-২৯ চাল প্রতি কেজি ৪৮-৫০ টাকা, মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৬০-৬২ টাকা, নাজিরশাইল বা সম্পা কাটারি প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোটা জাতের চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মোটা চালের দাম কমতে পারে।
বোরো মৌসুমে সরু ও মাঝারি জাতের ধান উৎপাদন হয়। সরু ও মাঝারি চাল হিসেবে পরিচিত জিরাশাইল ও কাটারি জাতের চালের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। বছরে একবার ধান উৎপাদন হওয়ায় সারা বছর তার ওপর নির্ভর করতে হয়। এ ধান থেকে বছরে ৮ থেকে ৯ মাস চাহিদা পূরনের পর শেষ সময় এসে দাম বাড়তে থাকে।
সব শ্রেণি পেশার মানুষের খাদ্যভাস পরিবর্তন হয়েছে। তারা এখন সরু ও মাঝারি জাতের চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত। বোরো মৌসুমের জিরাশাইল ও কাটারি ধানের সরবরাহ এখন বাজারে নেই বললেই চলে।
জেলার মান্দা উপজেলার শিহাটা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালামসহ তার এলাকার ১৭ জন শ্রমিক নওগাঁ শহরের পিরোজপুর গ্রামে ইটভাটায় কাজ করছেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন ১৪ কেজি করে চাল লাগে। প্রতিদিন কেনা প্রতিদিন খাওয়া। এক সপ্তাহ আগে যে চাল ৪৬ টাকা কেজি কিনেছিলাম এখন সেটা ৫০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। চালের দাম বাড়ায় আমাদের মতো শ্রমজীবীদের জন্য সমস্যা হচ্ছে।
নওগাঁ শহরের খুচরা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার বলেন, মোকাম থেকেই সরু ও মাঝারি চাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই সরু ও মাঝারি জাতের চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের চালের দাম বাড়ানো বা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা খুচরা চাল বিক্রেতা পাইকারি চাল ক্রয় করে কেজি প্রতি সামান্য কিছু লাভে বিক্রি করে থাকি। চালের বাজার মাঝে মধ্যেই ওঠা নামা করে।
খুচরা চাল বিক্রেতা মো. তাজু বলেন, সব ধরনের মানুষের কাছে কাটারি চালের চাহিদা বেশি। কাটারির পর জিরাশাইল চালের চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন ৫ বস্তা (প্রতি বস্তা ৫০ কেজি) কাটারি ও ২ বস্তা জিরাশাইল বিক্রি করতে পারি।
নওগাঁ চাল আড়ৎদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, বোরো ধান বছরে একবার উৎপাদন হয়। সারা বছর এ ধানের ওপরই নির্ভর করতে হয়। ইতোমধ্যে বছরের ৮ মাস চলে গেছে। স্বাভাবিকভাবে যখন ফসল উৎপাদন হয় তখন আমদানি বেশি থাকে এবং দামও কম হয়।
তিনি বলেন, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে চিকন ধান ও চালের পরিমাণ কমে আসছে। চালের দাম বাড়ার মূল কারণ এটাই। চালের দাম কমার জন্য আগামী বছরের বোরো ধান উৎপাদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে