`অবহেলিত এক জনপদের নাম চুনিয়াপটল। যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর গ্রামবাসীদের স্বপ্ন এখানে অধরাই রয়ে গেছে। প্রজন্ম পাল্টেছে, কিন্তু হয়নি একটা সেতু।‘ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চুনিয়াপটল গ্রামের এমনই দুর্দশার কথা বর্ণনা করলেন ওই গ্রামের যুবক মো. কামরুল হাসান সাগর।
তবে এবার দীর্ঘদিনের সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছেন এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রবাসী ও চাকরিজীবীরা। সাময়িক কষ্ট লাঘবের জন্য একটি কাঠের সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাতপোয়া ইউনিয়নের চর রৌহা বাজারের পূর্বপাশে যমুনার শাখা নদী দিয়ে পার্শ্ববর্তী চুনিয়াপটল, চর আদ্রা, বড় আদ্রা, চর রৌহা, চর নান্দিনা, ডাকাতিয়া, সিধুলী, হাটবাড়ি, সিংগুরিয়া ও ছাতারিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের ২০-২৫ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। কিন্তু কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া বা যাতায়াতের উপায় নেই। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং সময়ের অপচয় করে লোকজন ঈদগাহ্ সংলগ্ন মনির উদ্দিনের খেয়াঘাটে নৌকা দিয়ে পারাপার হয়।
স্থানীয়রা জানান, মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য যমুনার শাখা নদীর উপর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হচ্ছে কাঠের সেতু। ১১০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফিট প্রশস্ত কাঠের সেতুটিতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন এলাকার কয়েকশ মানুষ। আগামী বর্ষার আগেই তাদের এই কাজ শেষ করার তাড়া লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামের কমবেশি সবাই কোনো না কোনোভাবে সহযোগিতা করে এটি নির্মাণ করছেন।
চুনিয়াপটল গ্রামের শামসুল আলম দুখু জানান, এরশাদের আমল থেকে আমরা অবহেলিত, একটি সেতুর অভাবে উপজেলার ৪টি গ্রামের প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। এই ঘাট দিয়ে উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় শহরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বর্ষাকালে নৌকা এবং শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে পারাপার হতে হয়। সরকারি দফতরে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলেও জানান তিনি।
একমাস আগে কয়েকজন যুবক মিলে কাঠের সেতু করার উদ্যোগ নেন। সেই স্বপ্ন ডানা মেলে স্থানীয় প্রবাসী ও চাকরিজীবীদের আর্থিক সহযোগিতায়। সেতুটি নির্মিত হলে চুনিয়াপটল, আদ্রা, রৌহা, নান্দিনা, ডাকাতিয়া, সিধুলী, হাটবাড়ি, সিংগুরিয়া, ছাতারিয়া গ্রামের মানুষের দূর্ভোগ লাঘব হবে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে সাতপোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের জন্য এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় এলজিইডিতে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। তারপরও গ্রামবাসী তাদের পারাপারের সুবিধার্থে তাদের নিজ উদ্যোগে কারও বাঁশ, কারও কাঠ, কারও আর্থিক সহযোগিতায় একটি ব্রিজ নির্মাণ করছেন, যা চলমান রয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, অনেকগুলো ব্রিজ প্রস্তাবনা দেয়া আছে, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে। এই নদীতে ব্রিজ নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে এলে করা সম্ভব।
বাংলা৭১নিউজ/সিএফ