সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানে ঝণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ তদন্তে ব্যাংকটির সাবেক এমডিসহ ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিন ব্যাংকটির ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার (এমটিও) তপু কুমার সাহা, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কুমার মন্ডল, অপারেশন ম্যানেজার মোহা. মজুরুল আলম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার খালেদ মোশারেফ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জিয়াউল লতিফ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো মামুনুর রশীদ মোল্লা, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় এসএম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ তুলে তা লোপাট করার অভিযোগ উঠে। দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ওই ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা সরানোর তথ্য পাওয়া গেছে।
এস এম আমজাদ হোসেনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর পর বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় দুদক। তাদের দেওয়া প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে কিছু না জানালেও দুদক সচিব ড.মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, এরইমধ্যে ব্যাংক থেকে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে ও বিএফআইইউয়ের প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেডের নামে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। অথচ এ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। বিএফআইইউয়ের তদন্ত টিম সরেজমিনে গিয়ে এ ঠিকানায় কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পায়নি। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এস এম আমজাদ হোসেন নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংক ঋণ অনুমোদন করান এবং সেসব অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে বিএফআইইউয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এস এম আমজাদ হোসেন খুলনা বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক। প্রতিষ্ঠানটির বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ার তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের নামে। ২০১৬ সালের ১ জুন এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা শাখায় প্রতিষ্ঠানটির নামে ঋণ আবেদন করা হয়। পরদিনই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হয়। পরবর্তী সময়ে এ ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়। বর্তমানে এ অর্থের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকারও বেশি বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর এসবিএসির পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন আমজাদ হোসেন।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে আমজাদ হোসেন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
২০১৩ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন এস এম আমজাদ হোসেন। পদত্যাগপত্র জমা দিলেও আগামী মাসে (অক্টোবর) অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) পর এটি কার্যকর হবে। তিনি এ সময়ের মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করার অনুরোধ করেছেন।
এরইমধ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে এসবিএসি ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডাকা পর্ষদ সভায় ১৪ জন পরিচালক অংশ নিলেও ছিলেন না আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ।
পদত্যাগপত্রে আমজাদ হোসেন উল্লেখ করেছেন, তিনি কয়েক মাস ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তার পক্ষে এ অবস্থায় দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে চান। তিনি নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পর্ষদের প্রতি অনুরোধ জানান।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম