শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি উসমান খানের ডাকসু নিয়ে আমরা অনেক আগ্রহী : ঢাবি উপাচার্য শীতার্তদের জন্য কম্বল কিনতে সরকারের বরাদ্দ ৩৪ কোটি টাকা আমাদের ঐক্যের যুদ্ধে ব্যর্থতা রয়েছে: মির্জা ফখরুল ভারতের চক্রান্তে প্রতিবেশী দেশে একের পর এক গুপ্তহত্যা তরুণ প্রজন্মের ত্যাগ বৃথা হতে দেওয়া যাবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা সংবিধান সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়ল অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে কাজ চলছে: উপদেষ্টা বিদেশে বন্ধু চাই, প্রভু নয়: জামায়াত আমির রাজধানীতে ‘হট্টগোল শিশু উৎসব’ শুরু ৩ হাজার সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি তুরস্কের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে শীতার্তদের জন্য ৭ লাখ কম্বল সরকারি দপ্তরে তদবির বন্ধে সচিবদের কাছে তথ্য উপদেষ্টার চিঠি মসজিদুল আকসার ইমাম ১০ দিনের সফরে বাংলাদেশে চিটাগংকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল রাজশাহী বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা নাঈমুল ইসলাম ও তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ১৬৩টি, জমা ৩৮৬ কোটি ঘন কুয়াশায় এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় ঝরল ৪ প্রাণ, আহত ২১

অদম্য জীবনযোদ্ধা ‘মাউথ পেইন্টার’ ইব্রাহিম মল্লিক

নওগাঁ প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১
  • ৩২ বার পড়া হয়েছে

দুর্ঘটনায় দুই হাত হারিয়েছেন। দুই পাও পুরোপুরি অবশ। কিন্তু শারিরীক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাঁকে। ঠোঁট দিয়ে তুলি চেপে ধরে আঁকছেন একের পর এক ছবি। 

হুইল চেয়ারের সঙ্গে বিশেষ কায়দায় লাগানো ক্যানভাসে তুলির আঁচড়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ছবি। এভাবেই নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করেছেন ইব্রাহীম মল্লিক। এরই মধ্যে মাউথ পেইন্টার হিসেবে খ্যাতিও পেয়েছেন তিনি।

মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম মল্লিক নওগাঁর মান্দা উপজেলার চককেশব (বালুবাজার) গ্রামের মৃত নজর মল্লিকের ছেলে। বিধবা মা সুফিয়া বেগম, ভাই শহিদুল মল্লিক, ভাবি সুলতানা মল্লিককে নিয়ে তাঁর সংসার।

কিন্তু হুইল চেয়ারে বসে দিনের পর দিন ছবি আঁকতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। পিঠের দুইধারে ফোসকা পড়ে ইনফেকশন হয়। সেখান থেকে সৃষ্টি হয় দগদগে ঘা। এখন চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতেও পারেন না। এভাবে বিছানায় শুয়ে আছেন তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে। এরপরেও দমে যাননি অদম্য জীবনযোদ্ধা মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম মল্লিক। বিছানায় এক কাতে শুয়ে থেকেই ছবি আঁকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

লেখাপড়া করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। চাকরি করতেন পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে। ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক দুর্ঘটনায় তাঁর জীবনকে উলটপালট করে দেয়। দুর্ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দীর্ঘ ৮ বছর।

সিআরপিতে চিকিৎিসাধীন অবস্থায় জানতে পারেন লাভলী নামে প্রতিবন্ধী এক নারী মুখ দিয়ে ছবি আঁকছেন। কিন্তু লাভলীর সঙ্গে তাঁর কখনো দেখা হয়নি। লাভলীর গল্প শুনেই অনুপ্রাণিত হন। এরপর দীক্ষা নেন মুখ দিয়ে ছবি আঁকার। এ পর্যন্ত ৩ হাজারেরও বেশি ছবি এঁকেছেন। প্রায় সব ছবিই বিক্রি হয়ে গেছে।

তাঁর পেইন্টিং ঘরে শোভা পাচ্ছে মুখ দিয়ে আঁকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নওগাঁ পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়াসহ বিভিন্ন গুণীজনের ছবি।

ইব্রাহিম মল্লিক জানান, ‘প্রথমদিকে ছবি আঁকতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা হতো। মাথা ঘুরতো; অনেক সময় বমি করতাম। এখন সেসব সমস্যা আর নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা ছবি আঁকতে পারি। বেশি ভালো লাগে প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকতে। 

তিনি আরো বলেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তাঁদের অনেকের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ রয়েছে। তাঁদের মাধ্যমেই একসময় আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে আমার আঁকা ছবি বিক্রি হয়েছে।’

ইব্রাহিম মল্লিক আরো বলেন, তিনি এখন মরা লাশ ছাড়া আর কিছুই নন। শরীরের খুব সামান্য একটা অংশ শুধু সচল। দৈনন্দিন কাজ ও ছবি আঁকাতে সহযোগিতা করেন অসুস্থ মা, বড়ভাই ও ভাবি। জন্মের আড়াই বছর বয়সে বাবা মারা গেছেন। মা আছেন বলেই পরিবারের অন্য সদস্যরা খুব একটা খারাপ ব্যবহার করেন না। গ্রামের মানুষরাও খুব ভালোবাসেন। তবে মায়ের অবর্তমানে কী হবে এই চিন্তার কোনো কুলকিনারা খুঁজে পান না এই শিল্পী।

প্রতিবন্ধী এই শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নওগাঁ জেলার বর্তমান পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া (বিপিএম) ছবি আঁকার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। দুধ খাওয়ার জন্য একটি গাভী-বাছুর দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ। দুর্যোগ সহনীয় একটি বাসগৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এজন্য প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি।

স্থানীয় পরানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইলিয়াস খাঁন বলেন, মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম মল্লিক একজন গুণী শিল্পী। মুখ দিয়ে মুহুর্তেই যে কোনো ছবি আঁকতে পারেন। প্রতিবন্ধী হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হয়।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেকটাই থমকে গেছে এই মাউথ পেইন্টারের জীবন। ছবির অর্ডার না হওয়ায় এ পেশা থেকে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। পিঠের পেছনের ঘায়ের চিকিৎসা ও ড্রেসিং করাতে প্রতিমাসে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। মায়ের বিধবাভাতা ও তাঁর প্রতিবন্ধীভাতার টাকায় কোনো রকমে চলছে সংসার।

জীবনের বাঁকিটা সময় ছবি এঁকেই কাটাতে চান এই মাউথ পেইন্টার। সচ্ছলভাবে বাঁচতে প্রতিবন্ধী এ শিল্পী সরকার ও বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেন।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com