বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব-এর ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডন আয়োজিত “এ হাম্বল ট্রিবিউট টু বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মজিব: এ ফেয়ারলেস কোম্পানিয়ন ইন ক্রাইসিস অ্যান্ড স্ট্রাগল” শীর্ষক এক স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা এম.পি. বঙ্গমাতার জীবনের ওপর লেখা বই ও প্রবন্ধের বিশেষ ইংরেজি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের সভাপতিত্বে স্মারক অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মী ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এমপি। আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন শিশু একাডেমির সভাপতি প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব লাকি ইনাম, যুক্তরাজ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় সদস্য সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক।
এই ভার্চুয়াল স্মারক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ তরুণ প্রজন্মের অনেকে অংশগ্রহণ করে বঙ্গমাতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বঙ্গমাতার জীবনের ওপর লন্ডন মিশনের বিশেষ ইংরেজি প্রকাশনার উদ্যোগকে স্বাগত: জানিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা বলেন, “বঙ্গমাতা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু তিনি ছিলেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ একজন অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন মানুষ এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম পথ প্রদর্শক।”
রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দূরর্দিশতার পাশাপাশি বঙ্গমাতার অতুলনীয় মানবিক ও সাংসারিক গুণাবলি যা প্রতিমন্ত্রী তাঁর ছোটবেলায় প্রত্যক্ষ করেছেন সেসবের স্মৃতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, “পার্টির নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে করা রাজনৈতিক মামলার খরচ যোগানোর জন্য বঙ্গমাতা নিজের হাতের সোনার চুড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। সংসারের দায়িত্বও তিনি সমানভাবে পালন করেছেন।”
স্বাধীনতাপূর্ব উত্তাল সময়ের তুখোর ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রামে বঙ্গমাতার দুর্দান্ত সাহসী ও দূরদর্শী দিক-নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটময় মূহুর্তে বঙ্গমাতা পরামর্শক ও দিক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর প্রেরণাতেই বঙ্গবন্ধু কারাগারে থেকেও মহামূল্যবান দুটি বই লিখেছেন।”
হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বঙ্গমাতাকে বঙ্গবন্ধুর আপসহীন সংগ্রামী সহধর্মিনী ও মহীয়সী নারী হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “লন্ডন হাই কমিশন বঙ্গমাতার ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর জীবনের ওপর লেখা বই এবং প্রবন্ধ ইংরেজিতে অনুবাদের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যাতে নতুন প্রজন্মের প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণরা বিশেষ করে তরুণীরা তাঁর মূল্যবোধ ও আদর্শে উজ্জীবিত হতে পারে।”
হাইকমিশনার বলেন, “যতদিন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু ও মহীয়সী বেগম শেখ ফজিলান্নেসা মুজিব ‘বঙ্গমাতা‘ মর্যাদায় বাঙ্গালি জাতির হৃদয়ে এবং বাঙালি জাতির ইতিহাসে একজন অসাধারণ এবং অনুসরণীয় রোল মডেল হিসেবে চির-ভাস্বর হয়ে থাকবেন।”
স্মারক অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতাকে উৎসর্গ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক উর্মি মাযহার কবি অপূর্ব শর্মার একটি কবিতার হৃদয়স্পর্শী আবৃত্তি করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গমাতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ও তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এরপর বঙ্গমাতার জীবনের ওপর একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে