বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: পি. সারা ওভাল স্টেডিয়াম শ্রীলঙ্কার জন্য বেশ ঐতিহাসিক। ইতিহাসের পাতায় এ স্টেডিয়ামটিকে চিরতরে জড়িয়ে রেখেছে লঙ্কানরা। ১৩ ম্যাচ খেলার পর ১৪তম টেস্টে এ মাঠেই টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। হারিয়েছিল কাপিল দেবের ভারতকে।
শ্রীলঙ্কার জন্য ঐতিহাসিক হয়ে থাকলেও বাংলাদেশের জন্য এ মাঠ বিভীষিকাময়! তবে এ কলঙ্ক মুছে দেওয়ার উপলক্ষ খুঁজে পেয়েছে টাইগাররা। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে হারানোর সূবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। শততম টেস্টে স্বপ্নের জয়ের হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। আগের তিন ম্যাচের তিনটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হারা বাংলাদেশ এখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
শ্রীলঙ্কা চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছে ১৩৯ রানের লিড নিয়ে। হাতে আছে মাত্র ২ উইকেট। পঞ্চম দিনের শুরুটা ভালো হলে শেষ হাসিটা হাসার অপেক্ষায় থাকবে লাল-সবুজ জার্সীধারীরা। কলম্বো টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে বাংলাদেশ ৪৬৭ রানে অলআউট হয়। ১২৯ রানের লিড পায় মুশফিকুর রহিমের দল। জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৬৮ রান তুলেছে স্বাগতিক দল।
দিলরুয়ান পেরেরা বাংলাদেশের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ১২৬ বলে ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান তুলেছেন মাত্র ২৬ রান। তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন ১৭ বলে ১৬ রান করা সুরঙ্গা লাকমাল। দিনশেষে বাংলাদেশ আফসোস করছে দিলরুয়ান পেরেরার একটি এলবিডাব্লিউ নিয়ে। সাকিবের করা ৭৮তম ওভারের চতুর্থ বল ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করেছিলেন পেরেরা। অন দ্য লাইন বল পিচ করে ভিতরেও ঢুকছিল ঠিকঠাকমতো। কিন্তু পেরেরার ব্যাটে লাগার আগে বল আঘাত করে প্যাডে। সাকিবের আত্মবিশ্বাসী আবেদন। কিন্তু মন গলেনি আলিম দারের। আগের দুটি রিভিউ নিয়ে নষ্ট করায় আর নতুন করে রিভিউ নেওয়ার সুযোগ পাননি সাকিব। মাঠের বড় সাইট স্ক্রিনে বলটি রিপ্লে দেখাল। দলের প্রত্যেকেই মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন দীর্ঘক্ষণ। বিমর্ষ দেখাচ্ছিল সাকিবের মুখ। আলিম দার কি কারণে আউট দেননি তা তিনি শুধুই বলতে পারবেন।
তবে দিনের শুরুটা বাংলাদেশের ছিল দূর্দান্ত। মিরাজের প্রথম বলেই বোল্ড উপল থারাঙ্গা। দ্বিতীয় উইকেটে করুণারত্নে ও কুশল মেন্ডিস জুটি গড়েন ৫৬ রানের। মধ্যাহ্ন বিরতির পর তাদের এ জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেটাও রিভিউ নিয়ে। ফিজের বল স্কিড করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মেন্ডিসের ব্যাটের ছোঁয়া পায়। কিন্তু আম্পায়ার নট আউট ঘোষণা করেন। রিভিউ নিয়ে সফল বাংলাদেশ। ১৪৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর পথ ভুলতে বসে শ্রীলঙ্কা। ১৪৩ থেকে ১৯০ রানে যোগ হতেই আরও ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। মুস্তাফিজ ওই স্পেলে নেন আরও দুই উইকেট। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান দিনেশ চান্দিমাল মুস্তাফিজের কাটারে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিমের হাতে। চারওভার পর ধনঞ্জয় ডি সিলভাও বলে খোঁচা মেরে ক্যাচ দেন মুশফিকের হাতে। মাঝে সাকিব আল হাসান আউট করেন গুণারত্নকে। চা-বিরতির আগে দ্রুত ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। তবে সপ্তম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন সেঞ্চুরিয়ান করুণারত্মে ও দিলরুয়ান পেরেরা। দুজন ২২.২ ওভার ব্যাটিং করে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। এ জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে আবারও সাফল্যে ভাসান সাকিব আল হাসান। দিলরুয়ান সাকিবের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দেন। ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া করুণারত্নের রান তখন ১২৬।
এরপর শেষ সেশনের পানি পানের বিরতির পর নতুন বলে তাইজুল বোলিংয়ে এসে হেরাথের উইকেট পকেটে পুরেন। দুবার রিভিউ নিয়ে হেরাথ বাঁচতে পারেননি। শেষ বিকেলে ৮.৪ ওভার ব্যাটিং করেন পেরেরা ও লাকমাল। রান না তুললেও থিতু হয়ে উইকেটে টিকে আছেন তারা।
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের চোখে-মুখে জয়ের প্রতিচ্ছবি। শারীরিকভাষাতেও আমূল পরিবর্তন। আগের টেস্টে বিবর্ণ ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ এই টেস্টে কোনোভাবেই জয় হাতছাড়া করতে চায় না। প্রয়োজন সৌম্য, তামিমদের একটু ধৈর্য। তাতেই তৈরি হবে ইতিহাস।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস