সাহাবির পরিচয় : সাহাবি বলা হয়, যাঁরা ঈমানসহ রাসুল (সা.)-এর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হয়েছেন এবং ঈমানসহ মৃত্যুবরণ করেছেন। সাক্ষাতের অর্থ হলো, হয়তো সাহাবি নিজে স্বচক্ষে রাসুল (সা.)-কে দেখেছেন অথবা রাসুল (সা.) সাহাবিকে দেখেছেন। অতএব অন্ধ সাহাবিরাও এতে অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা তাঁরা স্বচক্ষে রাসুল (সা.)-কে না দেখলেও রাসুল (সা.) তাঁদের দেখেছেন। অন্ধ সাহাবিদের অন্যতম ছিলেন আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রা.)। (শরহে নুখবা, পৃষ্ঠা ৮১-৮২)
সাহাবায়ে কেরাম উম্মাহর সাধারণ কোনো ব্যক্তির মতো নন। আল্লাহ তাআলা তাদের রাসুল (সা.) ও উম্মাহর মধ্যে সেতুবন্ধকারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। রাসুল (সা.) এর সহচর ও ইসলামের ধারক হিসেবে আল্লাহ তাআলা তাঁদের নির্বাচন করেছেন। উম্মাহর কাছে তাঁদের মাধ্যম ছাড়া কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা পৌঁছার কোনো পথ নেই। জ্ঞানে-গুণে ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে তাঁদের অবস্থান ছিল সুউচ্চ শিখরে। তাই তো আল্লাহ তাআলা ও প্রিয় নবী (সা.) তাঁদের ঈমান ও আমলকে পরবর্তীদের আদর্শ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
সাহাবিদের অনন্য মর্যাদা : নিম্নে কোরআন ও হাদিসের আলোকে সাহাবিদের মর্যাদা সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো। আল্লাহ তাআলা বলেন,
১.‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জীবন ও সম্পদ দ্বারা জিহাদ করে। তাঁরাই সত্যনিষ্ঠ (বা সত্যবাদী)।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৫)
২. ‘কিন্তু আল্লাহ তাআলা তোমাদের অন্তরে ঈমানকে প্রিয় করেছেন, পক্ষান্তরে কুফরি, পাপাচার ও অবাধ্যতার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরাই (সাহাবিরা) সৎ পথ অবলম্বনকারী।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ৭)
৩. আল্লাহ তাআলা তাদের তাকওয়ার বাক্যে সুদৃঢ় করলেন। বস্তুত তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত : ২৬)। এই আয়াতে তাকওয়ার বাক্য বলতে তাওহিদ ও রিসালতের বাক্য বোঝানো হয়েছে।
৪. ‘তাঁরাই (সাহাবিরা) সত্যিকারের মুমিন, মহান রবের কাছে তাদের জন্য আছে সুউচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪)
৫. জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, জাহান্নামের আগুন এমন মুসলিমকে স্পর্শ করবে না যে আমাকে দেখেছে (অর্থাৎ সাহাবি), অথবা আমাকে যারা দেখেছে তাদের সে দেখেছে (অর্থাৎ তাবেয়ি)। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৫৮)
৬. আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা আমার সাহাবিদের গাল-মন্দ করো না। কেননা তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলে তাদের এক ‘মুদ’ (প্রায় ৩ ছটাক) কিংবা অর্ধ ‘মুদ’ এর সমান খরচের সওয়াব পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৭; মুসলিম, হাদিস : ৪৬১১)
৭. ‘আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমার সাহাবিদের কষ্ট দেয় সে যেন আমাকে কষ্ট দেয়; যে আমাকে কষ্ট দেয় সে যেন আল্লাহকে কষ্ট দেয়; যে আল্লাহকে কষ্ট দেয় অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬৮০৩)
বাংলা৭১নিউজ/এবি