সুন্দরবনের পর দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনভূমি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট রেমা-কালেঙ্গা। এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন। ১৭৯৫.৫৮ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমি থেকে প্রতিদিন উজাড় হচ্ছে মহামূল্যবান সব গাছ। ফলে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়ছে রেমা-কালেঙ্গা। বন বিভাগের লোকজন মাঝেমধ্যে চোরাই কাঠ আটক করলেও চোরাকারবারিরা রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গত ২৪ এপ্রিল কালেঙ্গা রেঞ্জ অফিসের এক কিলোমিটারের মধ্যে তালতলা টিলা থেকে শতবর্ষী ১১টি গাছ কেটে ফেলেছে গাছ চোরেরা। এর মধ্যে পাহাড়ি মেহগনি ৫টি ও ৬টি ডাগি জামগাছ। বন বিভাগের লোকজন কাটা গাছগুলোর কিছু অংশ উদ্ধার করতে পাড়লেও চোরেরা বেশির ভাগ গাছই পাচার করে ফেলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার ১১ দিন পরও এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি। কালেঙ্গা-রেমা ও ছনবাড়ি বিট থেকে প্রতিদিনই পাচার হচ্ছে সেগুনগাছ।
কালেঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, গাছ কাটা হলেও চোররা গাছ নিতে পারেনি। কাটা গাছ জব্দ করা হয়েছে। যার পরিমাণ ১৪০ ঘনফুট। এ ব্যাপারে বিট অফিসার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু অসাধু বন বিভাগের লোক, বন বিভাগ দ্বারা লালিত ভিলেজার (চুক্তিভিত্তিক বনপ্রহরী) স্থানীয় প্রভাবশালী সরকার দলীয় লোকজন এবং জনপ্রতিনিধিরাই মূলত রেমা-কালেঙ্গা ধ্বংসের পেছনে দায়ী। তাদের সহযোগিতাই বছরের পর বছর ধরে প্রকাশ্যে চলছে গাছপাচারের মহোৎসব। একসময় এই বনে ৫০০ প্রজাতির গাছ থাকলেও অব্যাহতভাবে গাছ কাটার কারণে এখন অনেক প্রজাতির গাছই বন থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে গাছপাচারের ইস্যুতে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বক্তব্য আমাদের লোকবল কম।
এদিকে চুনারুঘাটে বৈধ ও অবৈধ ৫১টি করাতকলে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ চিরাই হচ্ছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বন।
গাছপাচার রোধে ১৯৯৮ সালে চুনারুঘাটে বন বিভাগের স্পেশ্যাল টহল বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। এ বাহিনী গঠনের পর উপজেলায় গাছ চোরাকারবারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। এ বছর জানুয়ারিতে এখান থেকে টহল বাহিনী উঠিয়ে নেওয়া হয়। ফলে বন বিভাগ দ্বারা বেষ্টিত এ উপজেলায় বেড়ে যায় গাছপাচার। স্থানীরা গাছপাচার রোধে চুনারুঘাটে টহল বাহিনী পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে