সমুদ্রঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ মালদ্বীপ। প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসে এই সমুদ্রকন্যার সৌন্দর্য অবগাহনে। তাই ভারত মহাসাগরের ক্ষুদ্র এই দ্বীপরাষ্ট্র ঘিরে বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহের কমতি নেই।
মালদ্বীপের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে মালদ্বীপে ২৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। এর মধ্যে পর্যটন খাতে আসে প্রায় ৯ কোটি ডলার। কম্পানিগুলোর নিবন্ধক মরিয়ম ভিসাম জানান, যদিও ২০২০ সালের প্রায় পুরো সময়টাই গেছে মহামারি পরিস্থিতিতে, এর পরও বিপুল অঙ্কের এই বিনিয়োগ প্রমাণ করে মালদ্বীপ নিয়ে কতটা আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা। তিনি জানান, এসব বিনিয়োগের বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে।
দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে দেশটিতে মোট বিদেশি বিনিয়োগ আসে ৩৭০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পর্যটন খাতে আসে প্রায় ৮২ কোটি ডলার। দেশটিতে ২০১৯ সালে মোট ৭৮টি বিনিয়োগ আসে। মরিয়ম ভিসাম বলেন, ‘সাম্প্রতিক পর্যটন আইনের ফলে এ খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ফলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরো বাড়বে।’
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পর্যটন খাতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে মালদ্বীপ। জানা যায়, সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ টেনেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুম। তাঁর সময়ে মালদ্বীপে বিনিয়োগের জন্য ৫০টি রিসোর্ট খুলে দেওয়া হয়।
দেশটির গণমাধ্যম এভিএএস জানায়, মালদ্বীপে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে দ্রুত বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলতে পারা। পাঁচ বছর আগেও পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করলে সাত বছরের মধ্যে অর্থ ফেরত পাওয়া যেত; কিন্তু বর্তমানে পর্যটন অবকাঠামো ও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে আনতে ১০ বছর লেগে যাচ্ছে।
কমানো হয়েছে জমির লিজ ভাড়া
মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়, সাম্প্রতিক ঘোষিত রিসোর্ট উন্নয়নে তারা যে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে, তাতে বেশ সাড়া পড়েছে। এভিএএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র নীতি পরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘যেসব দ্বীপ বিনিয়োগের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে নুনু এবং হা আলিফ অ্যাটলের (একটি উপহ্রদকে ঘিরে বৃত্তাকার প্রবাল প্রাচীর) দ্বীপগুলোতে ব্যাপক সাড়া দেখা গেছে।
এগুলোতে জমির ভাড়া কমানো হয়েছে। এর পাশাপাশি হা ধালু এবং শাভিয়ানি অ্যাটলেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে।’ পর্যটনের জন্য জমির লিজ ভাড়া কমানোর কারণেই মূলত ব্যাপক সাড়া মিলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে হা আলিফ এবং হা ঢালু অ্যাটলে জমির লিজ ভাড়া প্রতি বর্গমিটারে আট থেকে কমিয়ে চার ডলার করা হয়েছে।’
এ বছর খুলে দেওয়া হচ্ছে ১৫ রিসোর্ট
বর্তমানে মালদ্বীপে ১৪৪টি রিসোর্ট ও ৩২৪টি গেস্টহাউস পুরোপুরি কার্যক্রমে রয়েছে। দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর নতুন করে ১৫টি রিসোর্ট খুলে দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি ৮৫টি রিসার্টে কাজ সমাপ্তির পথে রয়েছে। ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বরে দেশটির সরকার নতুন করে তিনটি দ্বীপ ও একটি এলাকাকে পর্যটন উন্নয়নের জন্য ঘোষণা করে।
বিনিয়োগের জন্য লিজ দেওয়া তিনটি দ্বীপ হচ্ছে—হা. অ্যালিধুফারু স্যান্ডব্যাংক, এসএইচ. কুদালহেইমেন্ডু ও এন. কুনামেলা। এর পাশাপাশি ১৫ হেক্টর কৃষিজমিও লিজ দেওয়া হচ্ছে। এগুলোতে বিনিয়োগে এরই মধ্যে ৬৫টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানান পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র নীতি পরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।
গুরুত্ব বাড়ছে বড় দেশগুলোর কাছে
ভারত মহাসাগরে অবস্থিত মালদ্বীপ এখন প্রতিবেশী চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের দেশগুলোর কাছে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব দেশ বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট রাষ্ট্রটিতে যুক্তরাষ্ট্র এখন দূতাবাস খোলারও ঘোষণা দিয়েছে।
মালদ্বীপের উন্নয়নে গত বছরের আগস্টে ভারত ৫০ কোটি ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করে। ১৯৬৫ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে মালদ্বীপ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত ছিল এর প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর একটি। প্রতিবেশী হিসেবে ভারত দীর্ঘ সময় মালদ্বীপের সঙ্গে বজায় রেখেছে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব।
অন্যদিকে মালদ্বীপের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে চীনের অর্থায়নে। দেশটির কাছে বিপুল অঙ্কের ঋণে আবদ্ধ মালদ্বীপ। ২০১১ সালের আগে মালদ্বীপে কোনো দূতাবাসই ছিল না চীনের। দেশটি যখন আন্তর্মহাদেশীয় বাণিজ্য বাড়াতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচি হাতে নেয়, তখন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এশিয়ার অন্যতম ছোট দেশটি।
২০১৬ সালে চীনের দেওয়া ৮০ কোটি ডলার খরচ করে মালদ্বীপের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হয়। করোনায় বিপর্যস্ত মালদ্বীপকে সহায়তা করতে হাত বাড়িয়েছে জাপান। গত সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপকে জাপান চার কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণ দেওয়ার কথা জানায়।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে