অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে কুমিল্লা গোমতী নদী দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত নৌপথে পণ্য পরিবহন উদ্বোধন হলেও নদীর নাব্যতা সংকটে থমকে আছে পরবর্তী কার্যক্রম। গত ৫ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের দিন প্রথমবারের মতো কুমিল্লা বিবির বাজার সীমান্ত দিয়ে কুমিল্লা-ভারতের সোনামুড়া নৌপথে ১০ টন সিমেন্ট নিয়ে একটি বার্জ ভারতের সোনামুড়া যায়।
কুমিল্লা বিবির বাজার স্থলবন্দর এলাকায় এ পথের উদ্বোধন করে নৌযানটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কিন্তু নৌ-বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় নতুন দুয়ার উন্মোচিত হতে চললেও গোমতীর নাব্যতা সংকটে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে এ উদ্যোগ। তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, গোমতীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ৩১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি, তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বুড়িচং ও আদর্শ সদর উপজেলার বুক চিড়ে বহমান ৯২ কিলোমিটার গোমতী নদী। এর মধ্যে প্রায় ৮৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে এবং অপর অংশ ভারতের। দুই দেশের মধ্যে নৌপথে বাণিজ্যিকভাবে নৌ-চলাচলে গ্রীষ্মে যেমন নদীর নাব্যতা সংকট, তেমনি বর্ষায় পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর ওপর ছোট-বড় ২৩টি কম উচ্চতার সেতু পণ্যবাহী বড় জাহাজ চলাচলে বড় সমস্যা। ফলে ছোট জাহাজেই পণ্য আমদানি-রফতানি মাথায় নিয়ে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ।
বিবিরবাজার সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল জানান, এ নৌ-রুটের বিষয়ে ত্রিপুরা সরকার খুব আগ্রহী। এর মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য সহায়ক হবে।
কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন, বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে স্থল ও নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। গোমতী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে এ প্রকল্প চালু হলে আমদানি-রফতানি পণ্যে উভয় দেশই উপকৃত হবে এবং বাড়বে সরকারি রাজস্ব।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বলেন, নৌপথে আমদানি-রফতানি শুরু হলে গোমতী প্রতিরক্ষা বাঁধের সুরক্ষার জন্য আমরা কাজ করব। তিনি আরও বলেন, গোমতীতে বর্ষায় পানিপ্রবাহ অনেক বেড়ে যায়, তখন কম উচ্চতা সম্পন্ন ও অপরিকল্পিতভাবে তৈরি ব্রিজের নিচ দিয়ে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। অপরদিকে গ্রীষ্মকালে পানিপ্রবাহ এতটাই কমে যায় যে তখন পণ্যবাহী ছোট নৌযান চলাচল সম্ভব হবে না। তাই খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনেই কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার সহকারী কমিশনার মো. সালাহ উদ্দিন রিপন জানান, বিবির বাজার স্থলবন্দর আর গোমতী নদীর নৌপথের দূরত্ব ২০০ মিটার। এ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি বিভিন্ন রফতানি পণ্য ও ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যে রাজস্ব আদায় হয়। নৌপথে পণ্য আমদানি ও রফতানির মাধ্যমে রাজস্ব আয় আরও বাড়বে।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে জানান, গোমতীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে পণ্যবাহী নৌ-চলাচলে উপযোগী করা একটি বড় প্রকল্প। এরই মধ্যে খননের জন্য ৩১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান করা হবে। এ জন্য খননকাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বসে নেই। আমাদের প্রকৌশলীরা এরই মধ্যে প্রকল্প এলাকা ঘুরে এসেছেন, তারাও কাজ করছেন। ভারতের সঙ্গে আমাদের নৌ-বাণিজ্যের এ উদ্যোগ সফল হবেই।
বাংলা৭১নিউজ/সর