মুজিববর্ষে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে চাকরি পাচ্ছেন ৫৮ ভিক্ষুক। আজ রোববার থেকে কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের চৌরখালি গ্রামে প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের মধ্যেই কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি অর্থায়নে এ ফ্যাক্টরির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। নতুন বছরের প্রথম দিনেই এই ফ্যাক্টরি উৎপাদনে যাবে। ওই দিন থেকেই ভিক্ষুকরা ওই ফ্যাক্টরিতে চাকরিজীবন শুরু করবেন। ভিক্ষুকের হাত কর্মীর হাতে পরিণত হবে। ফলে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির মানুষকে উন্নয়নের মূলধারায় শামিল করে দেশ একদিন সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আয়নাল হোসেন শেখ বলেন, কুশলা ইউনিয়নের চৌরখালি গ্রামের ৫৮ নারী-পুরুষ ভিক্ষাবৃত্তি পেশার সাথে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে এ পেশা থেকে উত্তরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কখনোই তাদেরকে এ পেশা থেকে নিবৃত্ত করা যায়নি। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি অর্থায়নে উপজেলা প্রশাসন কুশলা ইউনিয়নের একটি প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি নির্মাণ শুরু করেছে। এ উদ্যোগে ভিক্ষুকদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে গত ২ ডিসেম্বর চৌরখালি গ্রামে মতবিনিময় সভা করা হয়। এলাকাবাসী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সকলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভিক্ষুকরা আশ্বস্ত হয়েছে। তারা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতে সম্মতি দিয়েছে। প্রশাসন-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গৃহীত এ বিশেষ উদ্যোগ এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, কোটালীপাড়ায় প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে সরকারি অর্থায়নে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ফ্যাক্টরির নির্মাণ কাজ আমরা আজ (৬ ডিসেম্বর) থেকে শুরু করেছি। বিজয়ের এ মাসেই ফ্যাক্টরির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। ২০২১ সালের প্রথম দিন থেকেই ওই গ্রামের ৫৮ ভিক্ষুক চাকরিজীবী হিসেবে পরিচিতি পাবে। তাদের চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা হবে ভিক্ষুক। চাকরিপ্রাপ্তির সাথে সাথে তাদের ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে হবে। এতে করে তাদের সামাজিক সম্মান বৃদ্ধি পাবে। সকলের সহযোগিতায় ২ ডিসেম্বর মতবিনিময় সভা শেষে চৌরখালি গ্রামে আমরা ফ্যাক্টরির জন্য জমি নির্বাচন করি। এর মধ্য দিয়ে নতুন এক বিজয় অর্জনে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের এ পরিকল্পনা সফল হলে পরিবর্তন হবে চৌরখালির, পরিবর্তন হবে কোটালীপাড়ার। এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। একদিনেই হয়তো এটা হবে না, তবে একদিন হবেই নিঃসন্দেহে!কুশলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, এ উদ্যোগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ হবে। এ ক্ষুদ্র উদ্যোগটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস।চৌরখালি গ্রামের ভিক্ষুক রাবেয়া, বকুল বেগম, শওকত সরদার, সাহানা বলেন, ভিক্ষা করতে চাই না। কাজ করেই খেতে চাই। ভিক্ষায় কোনো সম্মান নেই। এতদিন কোনো ভালো কাজ পাইনি, তাই ভিক্ষা করছি। এখন উপজেলা প্রশাসন ফ্যাক্টরি করে চাকরি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে চাকরি করে সম্মানের সাথে বাঁচতে চাই।একই গ্রামের ভিক্ষুক আমিনা, মমতাজ বেগম, মনোয়ারা বেগম জানান, সংসারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তারা ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন। সারাদিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষা করে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন। সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও তারা এ পেশা ছাড়তে পারছেন না।
বাংলা৭১নিউজ/এমএস