তিস্তা নদী আবারও গতি পরিবর্তন করছে। মূল স্রোত ক্রমশ সরে আসছে বাম দিকে। আর স্রোতের তীব্রতা বাড়ায় শুরু হয়েছে ভাঙন। এর ফলে কার্তিক মাসে ভাঙনের কবলে পড়েছে তিস্তার বাম তীরের গ্রামগুলো।
এর মধ্যে তিস্তা রেলওয়ে ও সড়ক সেতু থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নাখেন্দা, গতিয়াসাম ও রামহরি; এই ৩ গ্রামের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। ভাঙনে গত এক সপ্তাহে গ্রামগুলোর ৩০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন। বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে ১৫টি পরিবার।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সকালে সরেজমিন নাখেন্দা ও গতিয়াসাম গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন। অন্যত্র বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে পাঁচটি পরিবার। কেটে নিয়ে যাচ্ছেন গাছপালা ও ক্ষেতের কাঁচা ধান গাছ।
গতিয়াসাম গ্রামের সুরুজ্জামান (৬০) ও তারেকুল ইসলাম এবং নাখেন্দা গ্রামের মোফাজ্জল হেসেন (৪৪) জানান, তারা ভিটেমাটি হারিয়ে এখন দিশেহারা। ঘরগুলো সরিয়ে নিয়ে সড়কে এবং কেউ অন্যের বাড়ির আঙিনায় রেখেছেন। সেখানে ঝুপড়ি তুলে মাথা গুঁজে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্থায়ীভাবে ঘর তোলার জায়গা জোটাতে পারেননি।
তাদের অভিযোগ, এই দুঃসময়ে কেউ তাদের পাশে এসে দাঁড়াননি। এমনকি দেখতে পর্যন্ত আসেননি।
এবার চার দফা বন্যার আঘাতের পাশাপাশি নদীভাঙন বিপর্যস্ত করে ফেলেছে এই জেলার জনজীবন। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬ নদ-নদীতে পানি কমে আসলেও ভাঙন পিছু ছাড়ছে না। ফলে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বিলীন হচ্ছে ভিটেমাটি, গাছপালা এবং আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
রাজারহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজিবুল হক জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে এই উপজেলায় তিস্তা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে ৩০টি পরিবার ভিটেমাটি গৃহহীন হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৪ মাসে এই উপজেলার ২৭২টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর সূত্র জানিয়েছেন, শুধু রাজারহাটে নয়। জেলার ৯ উপজেলাতে কমবেশি ভাঙন রয়েছে। গত প্রায় ৪ মাসে নদীভাঙনে ৫ হাজার ৪০৪টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৮৪টি পরিবার, উলিপুরে ১ হাজার ১৭৯টি পরিবার, চিলমারীতে ২ হাজার ৫৬টি পরিবার, রাজারহাটে ২৭২টি পরিবার, নাগেশ্বরীতে ৭৮টি পরিবার, ভূরুঙ্গামারীতে ৪৫০টি পরিবার, ফুলবাড়ীতে ১২৪টি পরিবার, রৌমারীতে ৩৬১টি পরিবার এবং রাজিবপুরে ৪০০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার জানান, ভাঙনে ভিটেমাটিহারা পরিবারগুলোর তথ্যাদি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন গৃহনির্মাণ বাবদ বরাদ্দ পাওয়া গেলে পরিবারগুলোকে এই সহায়তা দেওয়া হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এএম