বাংলা৭১নিউজ,(কক্সবাজার)প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার সৈকতে এবার ভেসে আসছে খড় কুটো, গাছের গুঁড়ি, কলাগাছ, মদের বোতলসহ নানা উচ্ছিষ্ট বর্জ্য। ভেসে আসা টন টন এসব বর্জ্যে হুমকির মুখে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত। এতে সৈকতের সৌন্দর্যহানীর পাশাপাশি স্থানীয়দের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে সৈকত। দ্রুত এসব বর্জ্য সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত টন টন উচ্ছিষ্ট বর্জ্য ভেসে আসছে। ভেসে আসা এসব বর্জ্যের স্তুপ সৈকতে পড়ে রয়েছে। আবার অনেক স্থানে এসব বর্জ্য পরিষ্কার করছেন বিচ পরিষ্কার কর্মীরা। এদিকে পরিষ্কার করা হচ্ছে অন্যদিকে আবার তা সৈকতে ভেসে যাচ্ছে। বিশেষ করে যখন জোয়ার আসছে; তখন জোয়ারের পানির সাথে এসব বর্জ্য বেশি আসছে।
বর্জ্য ভেসে আসার বিষয়টি সরজমিনে দেখতে সকালে সৈকতে আসেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
এসময় তিনি বলেন, সমুদ্র সৈকতে একের পর এক বর্জ্য ভেসে আসাটা চিন্তার বিষয়। তবে কি কারণে এসব বর্জ্য আসছে তা নিয়ে তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে; তারা কাজ করছে। আর সৈকতে পড়ে থাকা বর্জ্য পরিষ্কারে কাজ করছে বিচ পরিষ্কার কর্মীরা। দ্রুত এসব বর্জ্য সৈকত থেকে পরিষ্কার করে ফেলা হবে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ৪ মাস ধরে সৈকতে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে বুধবার থেকে কিছুটা শিথিলতা লক্ষ্য করা যায়। যার কারণে সৈকতে স্থানীয় দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। কিন্তু বর্জ্যের কারণে সৈকতে দর্শনার্থীদের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর পুরো সৈকত হয়ে পড়েছে সৌন্দর্যহীন।
সৈকতে বেড়াতে আসা শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, মঙ্গলবারও পুরো সৈকত ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কিন্তু বুধবার বিকেলে এসে দেখি সৈকতের বালিয়াড়িতে নানা ধরনের বর্জ্যে পড়ে আছে। যার কারণে বালিয়াড়িতে হাঁটা যাচ্ছে না। আর পুরো সৈকতে অপরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। একই সাথে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টের ব্যবসায়ী করিম বলেন, চলতি মাসের ১২ জুলাই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ভেসে এসেছিল। যেখানে ছিল মদের খালি বোতল, প্লাস্টিক বর্জ্য, ছেড়া জাল ও রশি। যার কারণে মারা পড়েছিল বেশ কিছু কচ্ছপও। কিন্তু এবারের দেখা যাচ্ছে ভিন্ন দৃশ্য। এবার ভেসে আসছে খড়কুটো, বাঁশ, গাছের গুঁড়ি, কলাগাছ, কচুরিপানা এবং প্লাস্টিক ও কাঁচের বোতল। কিন্তু এই পর্যন্ত কোন সামুদ্রিক জলজপ্রাণী মৃত কিংবা আহত অবস্থায় পাওয়া যায়নি।
এদিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বর্জ্য পরিষ্কারে কাজ করছেন ৩০ জন বিচ পরিষ্কার কর্মী। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত পরিষ্কার করেছে প্রায় ৫ ট্রাক বর্জ্য। যা জমা রাখা হয়েছে সৈকতের সি গাল পয়েন্টে।
বিচ পরিষ্কার কর্মী মুবিনা বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সকাল ৮টা থেকে সৈকতে সুগন্ধা পয়েন্টে সৈকত পরিষ্কারের কাজ করছি। কিন্তু সৈকতে ভেসে আসা এসব বর্জ্য পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। এদিকে পরিষ্কার করছি, অন্যদিকে জোয়ারের পানিতে নতুন করে বর্জ্য ভেসে আসছে। এসব বর্জ্য আসা কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ট্রাক বর্জ্য পরিষ্কার করেছি আমরা সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। কিন্তু এসব বর্জ্য দরিয়ানগর, কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী, শৈবাল, মাদ্রাসা, ডায়াবেটিস ও নাজিরারটেক পয়েন্ট পর্যন্ত রয়েছে।
বিচ পরিষ্কার কর্মীদের সুপার ভাইজার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন বলেন, সৈকতের নাজিরারটেক থেকে শুরু করে হিমছড়ি সৈকত পর্যন্ত এসব খড়কুটো, গাছের গুঁড়ি, কলাগাছসহ নানা বর্জ্য ভেসে আসছে। কিন্তু বর্জ্য আসা কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। এ পর্যন্ত ৩ ট্রাক বর্জ্য পরিষ্কার করেছি। দেখা যাচ্ছে; সৈকতে লাবণী থেকে কলাতলী পর্যন্ত আরও ৩০ ট্রাক বর্জ্য সৈকতে পড়ে আছে। আর বাকি সৈকতও একই অবস্থা।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই সৈকতে ভেসে আসে কাঁচের বোতল, রশি, জুতা, ছেঁড়া জালসহ নানা প্রকার প্লাস্টিক বর্জ্য। যার আঘাতে মারা যায় ৪০টির বেশি কচ্ছপ। সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে ১১৭টি কচ্ছপকে। আর ৫০ মেট্রিক টনের অধিক বর্জ্য সৈকতে ভেসে এসেছে বলে জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
বাংলা৭১নিউজ/জেআই