বাংলা৭১নিউজ,(হিলি)প্রতিনিধি: দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার সর্বত্র ফসলের মাঠ যেন এখন সোনালী এক বিছানা। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই সোনালীর সমারোহ। বাতাসে মাঠে মাঠে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। চারদিকে এ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। পাকতে ধরেছে তাদের বুনানো স্বপ্ন।
কৃষকের হৃদয়ে সঞ্চারিত হচ্ছে ভিন্ন আমেজ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা বোরো আবাদে সুফল পাচ্ছেন। ভালো ফলনের পাশাপাশি এবার বোরো ধানের ন্যায্য মূল্য পাবে বলে কৃষকরা আশায় বুক বাঁধছে।
দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের দুশ্চিন্তার মাঝেও কর্মবীর কৃষকের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটাতে দিন-রাত সমানতালে পরিশ্রম করে আসছেন। জমি থেকে এক মুহূর্তের জন্য বসে থাকার সময় নেই কৃষকের। রোপা বোরোর আগাছা ও পোকামাকড় দমন, সেচ ও বিভিন্ন কাজে ব্যন্ত সময় পার করছেন তারা।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান এক হাজার ৩৪০ হেক্টর, দেশি ৩৩০ হেক্টর ও উফশী জাতের ধান ৫ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে রোপণ করেছে কৃষকরা।
ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের দম ফেলার সুযোগ নেই। ধান গাছ পরিচর্যা ও সেচ দেয়াসহ প্রায় সারাক্ষণই রয়েছে ব্যস্ততায়। দ্রæতগতিতে বেড়ে যাচ্ছে বোরো ধানের চেহারা। মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে ধানের থোড়। আর আনন্দে দুলছে কৃষকদের মন। আর ১৫/২০ দিনের মধ্যেই ধান কাটা মাড়াই শুরু হবে।
কৃষকরা মনে করছেন, মাঝেমধ্যে নানামুখী সমস্যায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়ে এটি সত্য। এবার সাথে যোগ হয়েছে করোনায় চলমান সারাদেশে অঘোষিক লকডাউন। তারপরেও তারা আশাবাদী। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। সময়মতো শ্রমিক না পেলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে উত্তরের জেলাগুলো থেকে ধানকাটা শ্রমিক না আসলে পড়তে হবে বিপাকে। ধান ঘরে তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত যাতে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ
না হয় সেই প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর হাকিমপুর উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের কৃষক মমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন কৃষক জানান, এবার প্রতিটি গ্রামে প্রায় জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এখন সবুজ থেকে সোনালী রং ধারণ করছে ফসলের মাঠ। ভালো ফলন হবে বলে আমরা আশা করছি।
উপজেলার ছাতনী গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, চলতি মৌসুমে দুই একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি, আশা করছি ভালো ফলন হবে। বিগত সময়ে আমরা ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সরকার বেশি দামে ধান কিনলেও আমাদের মতো সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে না। তাই আমরা সঠিক দাম পাই না। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিসার শামিমা নাজনিন জানান, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতেও আমি অফিসে নিয়মিত উপস্থিত থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছি। তারা কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, কীটনাশক, পানি সাশ্রয়, পোকামাকড় দমন এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছে। এর ফলে কৃষকরা সঠিক সময়ে সার ও কীটনাশক তাদের ফসলি জমিতে প্রয়োগ করতে পেরেছে। আশা করা যাচ্ছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অন্য বছরের চেয়ে এ বছর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসআর