বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: করোনাভাইরাস বাদুড় থেকে না চীনের ল্যাব থেকে ছড়িয়েছে এ নিয়ে এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। তদন্ত শুরু করেছে আমেরিকা। অভিযোগের বিষয়টি চীনকে স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেইট মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, ‘চীনকে পরিষ্কার করতে হবে যে, কোনো জীবানুঅস্ত্র হিসেবে নয়, বরং উদীয়মান ভাইরাস মোকাবেলায় নিজেদের বিজ্ঞানীদের শ্রেষ্ঠাত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাগত দূর্ঘটনায় করোনা ছড়িয়েছে।’ এর আগে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘উহানের ভাইরোলোজি ল্যাবে বাদুড় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে দূর্ঘটনাবশত মানবদেহে এসেছে কিনা বিষয়টি বের করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।’
এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে চীনের নেতারা দাবি করেন উহানের সামুদ্রিক বাজার থেকে করোনা ছড়িয়েছে। একটি সূত্র ফক্স নিউজকে জানায়, ওই বাজারে বণ্যপ্রাণী বিক্রি হয় কিন্তু বাদুড় নয়। বিষয়টিকে চীন সরকার ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। মূলত ’পেশেন্ট জিরো’ বা প্রথম আক্রান্ত রোগী ছিলো ওই ল্যাবের একজন, তিনি যখন কাজ শেষে বাইরে আসেন তখন তার থেকেই সেটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। যে সূত্রটি গোয়েন্দাদের এ তথ্য দিয়েছে তারাই ফক্স নিউজকে নিশ্চিত করেছে।
পম্পেও ফক্স নিউজকে বলেন, ‘আমরা যেটি জানি তা হচ্ছে উহান থেকেই এ ভাইরাসের সূত্রপাত। সেখানে কাঁচাবাজার থেকে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলোজি ল্যাব কয়েকমাইল দূরে। সুতরাং আমাদের আরো অনেক কিছু বোঝার আছে। বিষয়টি আরো স্পষ্ট হতে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।’
বুধবার হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের আরো অনেক কিছু জানতে হবে। এ ভয়ানক ঘটনা নিয়ে আমরা তদন্ত করে দেখছি।’ বিষয়টি তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনংপিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘ল্যাব নিয়ে তার সঙ্গে কি কথা হয়েছে তা এখানে আলোচনা করা সমিচীন হবে না।’
২০১৭ সালে চীন উহান প্রদেশে একটি উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ল্যাব তৈরি করে। যেখানে ইবোলা, সার্সের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজ্জনক কিছু ভাইরাস নিয়ে কাজ করার কথা জানায় বেইজিং। চীনা গবেষকরা দাবি করেছিল, গবেষণা ল্যাবটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ল্যাবরেটরিটি উহানে অবস্থিত হুনান সি-ফুড মার্কেট অর্থাৎ হুনানের সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী ওই বাজারের একজন বিক্রেতা। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর গবেষকরা বলে আসছিলেন যে, বন্যপ্রাণী থেকে এ ভাইরাস মানবদেহে এসেছে।
২০১৫ সালে ল্যাবটির নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ল্যাবটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও বিপদজ্জনক ভাইরাসগুলোর গবেষণা করে সেগুলোর প্রতিষেধক বের করা। মূলত ভাইরাস নির্মূলে বিশ্ব দরবারে চীন তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চেয়েছিল ল্যাবটি ব্যবহার করে। এটি চীনের সর্বপ্রথম বায়োসেফটি লেভেল-৪ (বিএসএল-৪) মানের ল্যাব। বিএসএল-৪ হলো সর্বোচ্চ বিপদজ্জনক ভাইরাস, এগুলো নিয়ে নিরাপদে কাজ করা যায় এমন ল্যাবকেই বিএসএল-৪ ল্যাব বলা হয়।
যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীনগত প্রমাণ বলছে করোনাভাইরাস কৃত্রিমভাবে তৈরী নয়, বরং এটি বাদুড় থেকে এসেছে। এরপর তা মানবদেহে ছড়িয়েছে। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে বেইজিংয়ে আমেরিকান দূতাবাস ওয়াশিংটনে দুটি সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলো। যাতে বলা হয়েছে উহানের ল্যাবে চীন জীবানু নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গবেষণা চালাচ্ছে, যেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।
সূত্র ফক্স নিউজকে জানায়, উহান ল্যাবটি ফ্রান্স ও আমেরিকান সরকারের সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণের চেষ্টা করছিলো। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ল্যাবের কর্মকর্তারা ভাইরাসের স্যাম্পল ধ্বংস করে ফেলে। আগের বিভিন্ন প্রতিবেদন ও কাগজপত্র লুকিয়ে ফেলে। যাতে ভাইরাস সূত্রপাতের মূল কারণটি খুঁজে পাওয়া না যায়।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: মেইল অনলাইন