বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: কোরআন তিলাওয়াত : কোরআন মানুষকে আলোকিত করে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে। মহান আল্লাহ এই মহাগ্রন্থটিকে জ্যোতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘…আল্লাহর কাছ থেকে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের কাছে এসে গেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, এটা দিয়ে তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ ইচ্ছায় অন্ধকার থেকে বের করে আলোকে নিয়ে আসেন। আর তাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১৫-১৬)
কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আলোকিত মানুষ তৈরি করা। এ কথা পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে, ‘তিনিই (আল্লাহ) তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করেন, তোমাদের অন্ধকার থেকে আলোকে আনার জন্য। আল্লাহ তো তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ৯)
দারিদ্র্যে ধৈর্য : দারিদ্র্যকে অনেকে আজন্ম পাপ মনে করেন। পৃথিবীর বুকে দরিদ্র হয়ে জন্ম নেওয়াই একটি বড় ধরনের পাপ। এ ধরনের ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কোনো দরিদ্র ব্যক্তি যদি মহান আল্লাহর হুকুম মতো জীবন পরিচালনা করে, ধৈর্য ধারণ করে, সত্ভাবে জীবনযাপন করে, তবে এই দারিদ্র্যই আলোকিত করবে। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, একদিন আমি মসজিদে বসে ছিলাম। দরিদ্র মুহাজিরদের একটি দলও মসজিদে বসা ছিল। এমন সময় রাসুল (সা.) এসে তাঁদের কাছে বসে বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা সুসংবাদ গ্রহণ করুন। তাঁদের চেহারা উজ্জ্বল হোক। কারণ তাঁরা ধনীদের ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি দেখলাম, তাঁদের রং পরিবর্তন হয়ে উজ্জ্বল হয়ে গেল। আমারও আশা জাগল, আমি যদি তাঁদের মাঝে হতাম!’ (দারেমি, হাদিস : ২৭২১)
অজু : কোনো ব্যক্তি যথাযথভাবে অজু করলে মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন। দুনিয়ার অনেক ক্ষতি ও ভাইরাস থেকেও নিরাপদে রাখেন। যারা উত্তমরূপে অজু করে, কিয়ামতের দিন তাদের অজুর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। আবার নুআইম ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি আবু হুরায়রা (রা.)-কে অজু করতে দেখলেন। অজু করতে তিনি মুখমণ্ডল ও হাত দুটি এমনভাবে ধুলেন যে প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধুয়ে ফেললেন। এরপর পা দুটি এমনভাবে ধুলেন যে পায়ের নালার কিছু অংশ ধুয়ে ফেললেন। এভাবে অজু করার পর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মত অজুর প্রভাবে কিয়ামতের দিন দীপ্তিময় মুখমণ্ডল ও হাত-পা নিয়ে উঠবে। কাজেই তোমরা যারা সক্ষম তারা অধিক বিস্মৃত দীপ্তিসহ উঠতে সে যেন চেষ্টা করে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৬৮)
নামাজ : নামাজকে বলা হয় জান্নাতের চাবি। নামাজের মাধ্যমে মুমিন তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতে লিপ্ত হয়। নামাজ দুনিয়াতে মানুষকে আলোকিত করে। অপরাধ থেকে ফিরিয়ে আনে। পরকালেও নামাজ মানুষের জন্য জ্যোতি হবে। আবু মালিক আল-আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অজু ঈমানের অর্ধেক। আলহামদুলিল্লাহ দাঁড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়। সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ একসঙ্গে আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যবর্তী জায়গা ভর্তি করে দেয়। নামাজ হলো নূর (জ্যোতি), সদকা (দান-খয়রাত) হলো (মুক্তির) দলিল এবং ধৈর্য ও সহনশীলতা হলো আলোকবর্তিকা। কোরআন তোমার সপক্ষে অথবা বিপক্ষে সনদ বা সাক্ষ্যস্বরূপ। ভোরে উপনীত হয়ে প্রতিটি মানুষ নিজেকে বিক্রয় করে। (এর মাধ্যমে) সে নিজেকে হয় আজাদ করে অথবা ধ্বংস করে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৭)
অন্ধকারে মসজিদে যাতায়াত : অনেকেই আছেন অলসতার দরুন এশা ও ফজরের নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতে আদায় করেন না। অথচ পবিত্র হাদিসে এই দুটি নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়ার ব্যাপারে বিশেষ উপহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বুরায়দাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যারা অন্ধকার রাতে মসজিদে যাতায়াত করে তাদের কিয়ামতের দিন পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৬১)
সুরা কাহফ : ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে, তার পায়ের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত নূর প্রজ্বালিত করা হবে এবং কিয়ামত দিবস তার জন্য উজ্জ্বল হবে আর দুই জুমার মাঝের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সূত্র : তাফসিরে ইবনে কাসির : ৬/৩৯৮)
আল্লাহর রাস্তায় সময় দেওয়া : আমর ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার পথে যে লোক বুড়ো হয়েছে, তার জন্য কিয়ামতের দিন একটি আলোকবর্তিকা থাকবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৫)। উল্লেখ্য, আল্লাহর রাস্তা বলতে দ্বিন-সম্পর্কিত সব কাজকে বোঝানো হয়েছে।
আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম : দ্বিন প্রচারের জন্য যেমন উত্তম চরিত্র অর্জনের প্রয়োজন, তেমনি দ্বিন রক্ষা করার জন্য কখনো কখনো লড়াই-সংগ্রামেরও প্রয়োজন হয়। এটা আল্লাহর রীতি। যাঁরা দ্বিন রক্ষার্থে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করবে, মহান আল্লাহ তাঁদের আলোকিত করবেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় তীর নিক্ষেপ করবে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য আলো হবে। (আততারগিব ওয়াত তারহিব : ২/১৯৮)
দোয়া : এ ছাড়া বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা যেতে পারে। যাতে তিনি আমাদের ও আমাদের সব কাজকে আলোকিত করে দেন। রাসুল (সা.) থেকেও এ ধরনের দোয়া করার প্রমাণ পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, (উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাজআল ফি কলবি নূরা, ওয়া ফি বাসারি নূরা, ওয়া ফি সাম-ই নূরা, ওয়া আ’ইঁইয়ামিনি নূরা, ওয়া আ’ই ইয়াসারি নূরা, ওয়া ফাওকি নূরা, ওয়া তাহতি নূরা, ওয়া আমামি নূরা, ওয়া খলফি নূরা, ওয়াজআল লি নূরা।’) অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে-বামে, আমার উপর-নিচে, আমার সামনে-পেছনে, আমার জন্য নূর দান করুন। (বুখারি, হাদিস : ৬৩১৬)
বাংলা৭১নিউজ/এইচএম