শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি উসমান খানের ডাকসু নিয়ে আমরা অনেক আগ্রহী : ঢাবি উপাচার্য শীতার্তদের জন্য কম্বল কিনতে সরকারের বরাদ্দ ৩৪ কোটি টাকা আমাদের ঐক্যের যুদ্ধে ব্যর্থতা রয়েছে: মির্জা ফখরুল ভারতের চক্রান্তে প্রতিবেশী দেশে একের পর এক গুপ্তহত্যা তরুণ প্রজন্মের ত্যাগ বৃথা হতে দেওয়া যাবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা সংবিধান সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়ল অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে কাজ চলছে: উপদেষ্টা বিদেশে বন্ধু চাই, প্রভু নয়: জামায়াত আমির রাজধানীতে ‘হট্টগোল শিশু উৎসব’ শুরু ৩ হাজার সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি তুরস্কের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে শীতার্তদের জন্য ৭ লাখ কম্বল সরকারি দপ্তরে তদবির বন্ধে সচিবদের কাছে তথ্য উপদেষ্টার চিঠি মসজিদুল আকসার ইমাম ১০ দিনের সফরে বাংলাদেশে চিটাগংকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল রাজশাহী বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা নাঈমুল ইসলাম ও তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ১৬৩টি, জমা ৩৮৬ কোটি ঘন কুয়াশায় এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় ঝরল ৪ প্রাণ, আহত ২১

ধানে লোকসান, বিকল্প শষ্য চাষে আগ্রহী কৃষকরা

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ১৬২ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি: ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় গেলো কয়েক বছর ধরে বোরো চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন হবিগঞ্জের চাষীরা। অব্যাহত এই লোকসানের কারণে বোরো আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে অনেক জমি অনাবাদি রাখছেন অভিমানী কৃষকরা। বোরো আবাদের মৌসুম শেষের দিকে আসলেও জেলায় এখনও প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, তাদের এ অভিমান স্থায়ী হবে না। অনাবাদ কমাতে বিকল্প শষ্য চাষে আগ্রহী করা হচ্ছে কৃষকদের।

জানা যায়, গেলো কয়েক বছর ধরে হবিগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও বন্যার কারণে মাথায় হাত পড়ে কৃষকদের। সেই সাথে ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন কৃষকরা। অব্যাহত লোকসানের কারণে বোরো চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তারা। বিকল্প পেশা নিয়ে অনেকে আবার এলাকা ছেড়ে পারি জমাচ্ছেন শহরে। ফলে দেখা দিচ্ছে শ্রমিক সংকটও। সব মিলিয়ে হতাশাগ্রস্থ কৃষক পতিত রেখে দিচ্ছেন অনেক জমি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বোরো আবাদের মৌসুম প্রায় শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে মাত্র ৮০ হাজার হেক্টর জমি। বাকি প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিই অনাবাদি রয়ে গেছে।

বোরো আবাদ কমে যাওয়ার প্রমাণ তুলে ধরেছেন সার-বীজ বিক্রেতা ও বিদ্যুৎ অফিস। ব্যবসায়িদের মতে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সার-বীজ বিক্রি কমেছে অর্ধেক। ফলে টন টন বীজ কোম্পানীতে ফেরত পাঠিয়েছেন ডিলাররা। আর বিদ্যুৎ অফিস বলছে সেচ পাম্পের জন্য গত বছর জেলায় ৩৩টি সংযোগ দেয়া হলেও চাহিদা না থাকায় এ বছর সংযোগ দেয়া হয়েছে মাত্র ৮টি।

কৃষকরা বলছেন, সার-বীজের দাম, শ্রমিকের মজুরি, সেচ-হালের ব্যায় দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতো দূরের কথা, উল্টো দিনদিন কমছে ধানের দাম। সরকারের পক্ষ থেকে ধান কেনা হলেও তা যথেষ্ট নয়। আবার সরকারি ধান সংগ্রহে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হয় না। এসব কারণে বোরো চাষ করে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ লোকসান গুণতে হয় কৃষকদের। ফলে এ বছর অনেক কৃষকই বোরো চাষ না করে ফাঁকা রেখে দিয়েছেন ধানী জমিগুলো।

সরেজমিন বানিয়াচং, লাখাই, মাধবপুর, সদর ও নবীগঞ্জ উপজেলায় বেশ কিছু হাওরে ঘুরে দেখা যায় বিস্তীর্ণ হাওর এখনও ফাঁকা পরে আছে। জমিগুলো ফেঁটে চৌচির হয়ে গেলেও চাষের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না কৃষকদের মধ্যে। কেউ কেউ আবার ধানী জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজি ফলিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা লুকড়া এলাকার কৃষক আল আমীন বলেন, ‘বোরো চাষ সব চেয়ে কষ্টকর ও ব্যায়বহুল। বোরো আবাদ করতে বীজতলা তৈরী, সার প্রয়োগ, বীজতলা থেকে ছাড়া উত্তোলন, ধানী জমি প্রস্তুত, চাড়া রোপন, আবার সার প্রয়োগ, কিটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিস্কার, ধান কাটা, মারাই করা ও ধান শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত শুধু খরচ আর খরচ। অথচ এতো খরচ আর পরিশ্রমের পরও ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। তাই এ বছর জমি করা কমিয়ে দিয়েছি।’

একই উপজেলার দল গ্রামের কৃষক তালেব মিয়া বলেন, ‘অন্য বছর কয়েক একর জমিতে বোরো চাষ করতাম। কিন্তু এ বছর শুধুমাত্র পরিবারের সারা বছরের খাবারের জন্য কিছু জমি চাষ করেছি। বাকি জমিগুলো এ বছর চাষ করব না।’

তিনি বলেন- ‘রোপনের সময় একজন শ্রমিকের মজুরি সাড়ে ৩শ টাকা, আর ধান কাটার সময় ৫০০ টাকা লাগে। সেই সাথে আরও অন্যসব খরচতো আছেই। অথচ এক মন ধানের দাম মাত্র ৪০০ টাকা। তাহলে জমি করে কি লাভ ? উল্টো প্রতি বছরই অনেক টাকা লোকসান গুণতে হয় আমাদের।’

একই এলাকার আব্দুর রহিম বলেন- ‘কিছু জমি বর্গা দিয়ে দিয়েছি। বোরো চাষ করে লোকসানের কারণে চাষিরা বর্গাও নিতে চায় না। তাই আমার অনেক জমি এ বছর পতিত পরে রয়েছে। আর কিছু জমিতে সবজি ফলিয়েছি।’

কৃষির এমন চিত্র তুলে ধরলেন সার-বীজ ডিলাররা। এ বছর বোরো মৌসুমে বিপুল পরিমাণ বীজ ফেরত পাঠানো হয়ছে কোম্পানীর কাছে। আর গোডাউনে আটকা পরে আছে প্রচুর পরিমাণ সার।

এ ব্যাপারে মেসার্স রনি ও নয়ন ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক সুবীর দাশ বলেন, ‘চাহিদা না থাকার কারণে এ বছর অবিক্রিত প্রায় ২০ টনের মতো বীজ কোম্পানীর কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ৩২ মেট্রিক টনের মতো সার গোডাউনে মজুদ রয়েছে। এগুলো বিক্রি হবে বলেও আশা নেই।’

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘ধানের ন্যায্যমূল্য না থাকার কারণে বোরো আবাদে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ধানের ন্যায্য নিশ্চিত করা গেলে কৃষকের আগ্রহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ধানের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকরা যাতে লাভবান হয় তার জন্য বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা, সরিষা ও সূর্যমুখী আবাদের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ বছর হাওর এলাকায় ৫শ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, তিন হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা ও প্রায় ৫শ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। এভাবে বিকল্প ফসলের দিকে কৃষকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

বাংলা৭১নিউজ/একে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com