বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: খ্যাতিমান কবি শহীদ কাদরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সকাল থেকেই শহীদ মিনারে আসতে থাকেন কবির ভক্ত-অনুরাগীরা। বেলা ১১টার পর যখন তাঁর মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হয় তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন কবিকে শেষবারের মতো দেখতে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতি আয়োজিত শেষ শ্রদ্ধার এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন দেশের শীর্ষ কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
জোহরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কবির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্তানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
এর আগে সকালে এমিরেটস এয়ারলাইনের একটি ফ্লাইটে কবির মরদেহ নিউ ইয়র্কের থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে।
নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রবিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী নীরা কাদরী, এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব রেখে যান।
শহীদ কাদরী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। গত শনিবার স্থানীয় সময় রাত তিনটার দিকে কবিকে নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কবি শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায় জন্ম নেন। বাংলা কবিতায় এক অসাধারণ প্রতিভাশীল কবি ও লেখক তিনি। তিনি ১৯৪৭ সাল পরবর্তীকালের বাংলা সংস্কৃতির বিখ্যাত কবিদের একজন, যিনি নাগরিক-জীবন-সম্পর্কিত শব্দ চয়ন করে নাগরিকতা ও আধুনিকতাবোধের সূচনা করে বাংলা কবিতায় সজীব বাতাস বইয়ে দিয়েছেন। তিনি আধুনিক নাগরিক জীবনের প্রাত্যহিক যন্ত্রণা ও ক্লান্তির অভিজ্ঞতাকে কবিতায় রূপ দিয়েছেন। ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যের তীক্ষ্ণ শাণিত রূপ তাঁর কবিতাকে বৈশিষ্ট্য দান করেছে। শহর এবং তার সভ্যতার বিকারকে শহীদ কাদরী ব্যবহার করেছেন তাঁর কাব্যে। তাঁর কবিতায় অনুভূতির গভীরতা, চিন্তার সূক্ষ্মতা ও রূপগত পরিচর্যার পরিচয় সুস্পষ্ট।
শহীদ কাদরী কলকাতায় জন্ম নিলেও ১০ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সালে এগার বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরাধিকার বের হয় ১৯৬৭ সালে, তখন তাঁর বয়স ২৫ বছর। স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে তিনি প্রবাসী জীবন বেছে নেন। প্রথমে জার্মানির বার্লিন, পরে লন্ডন হয়ে নিউইয়র্কে বসবাস করছিলেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে- উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা (১৯৭৪), কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই, আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও (২০০৯)।
কবিতায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক (২০১১) পেয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একুশের পদক তিনি নিজে গ্রহণ করতে পারেননি। তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন তার বন্ধু মফিদুল হক। তবে ওই বছরের ৬ মার্চ নিউইয়র্কে কবির হাতে সরকারের পক্ষ থেকে একুশে পদক তুলে দেয়া হয়।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস