বাংলা৭১নিউজ,(বরিশাল)প্রতিনিধি: বরিশালের বাকেরগঞ্জে পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ ভবনের নীচ তলায় থাকা ওই অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুরের পর অফিসের একটি কক্ষের দরজায় তালা ঝুলিয়ে এক কর্মচারীকে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ কর্মচারীকে উদ্ধার করেন।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস ভাঙচুরের সত্যতা স্বীকার করলেও জড়িতদের পরিচয় জানেন না দাবি করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শী কর্মচারী চেইনম্যান শামসুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডাকুয়ার নেতৃত্বে ১৫/২০ জন নেতাকর্মীসহ তার কাছে পরিসংখ্যান অফিসের চাবি চায়। এক পর্যায়ে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি ছিনিয়ে নিয়ে দরজা খুলে অফিসের আসবাবপত্র ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় পরিসংখ্যান অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেনকে খুঁজে না পেয়ে তাকে (সহকারী কর্মকর্তা) অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে তারা। ভাঙচুর শেষে তাকে (শামসুজ্জামান) অফিসের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে তাকে ওই কক্ষ থেকে উদ্ধার করেন।
উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের একাধিক কর্মচারী বলেন, পরিসংখ্যান কার্যালয়ের অধীন গণশুমারি ও গৃহগননায় অস্থায়ী ভিত্তিতে ৩০০ লোক নিয়োগ করা হবে। তারা ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ১০ দিন কাজ করবেন। নিয়োগের জন্য গত সোমবার পরিসংখ্যান কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার সকালে এর তালিকা অফিসের কক্ষে সামনে নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওই তালিকায় ছাত্রলীগের সুপারিশকৃতদের নাম না থাকায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডাকুয়ার নেতৃত্বে এই ভাঙচুর চালানো হয়। এমনকি নোটিশ বোর্ডের নোটিশও ছিড়ে ফেলে তারা।
সাইফুল ইসলাম পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান ডাকুয়ার ভাইয়ের ছেলে। এ কারণে তার দাপটে বাকেরগঞ্জের সবাই তটস্থ থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায় বলেন, ভাঙচুরের সময় তিনি উপজেলা পরিষদে একটি জরুরি সভায় ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ কর্মচারীকে উদ্ধার করেন। এ কারণে কারা ভাঙচুর করেছে তা বলতে পারছেন না। বাকেরগঞ্জে পরিসংখ্যান কর্মকর্তা না থাকায় বরিশালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তার সাথে আলোচনা করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
পরিসংখ্যান আফিসে হামলা-ভাঙচুরের সত্যতা নিশ্চিত করে বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামসুল আলম চুন্নু বলেন, পরিসংখ্যান অফিসে হামলা-ভাঙচুরের খবর তিনি শুনেছেন। এটা কাম্য নয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা পর্যায়ে তিনি প্রধান ব্যক্তি হওয়ার পরও তাকে এই নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও ভুল করেছেন বলে দাবি উপজেলা চেয়ারম্যানের।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডাকুয়া তার নেতৃত্বে ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই সময় তিনি পৌর শহরের সাহেবগঞ্জে ২১ ফেব্রুয়ারীর পালন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভায় ছিলেন। ভাঙচুরের সাথে তিনি কিংবা তার দলের কেউ জড়িত নয় বলে তিনি দাবি করেন।
বাংলা৭১নিউজ/আরএস