বাংলা৭১নিউজ,(সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধি: শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের পোতাজিয়া চক্রবর্তী পাড়ার একটি খালের ওপর নির্মিত কালভার্ট বালু দিয়ে ভরাট করায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কালভার্টটির উচ্চতা কম হওয়ায় স্বাভাবিক বন্যায় এর ওপর পানি ও উঠছে। কালভাটটি নির্মাণের পর এক বছরের সংযোগ সড়ক অ্যাপ্রোচ মাটির কাজ শেষ না করায় কালভার্টটি এখন মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বালু দিয়ে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় পাশের কুমুদীঘির বিলে প্রবেশ পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
কালভার্টটি এখন এলাকার মানুষের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। আর এ জন্য এলাকাবাসী দুষছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমকর্তা জেন্দা আলীকে। তিনি এখন নীলফামারীর সদর উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত। সব জেনেও কর্তৃপক্ষ নীরব।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহজাদপুর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ কালভার্টটি নির্মাণ করেন। পোতাজিয়া ইউনিয়নের ঘোষপাড়া, ভিটাপাড়া, গাতিপাড়া ও চক্রবর্তী পাড়ার শতশত মানুষের যাতায়াতের জন্য কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে পার্শ্ববর্তী বিলচাঁদই, কেনাই, বহল বাড়ি, আঙ্গারু, রেশম বাড়িসহ শাহজাদপুর উপজেলার পশ্চিমের অঞ্চলের দুগ্ধ খামারিরা দুধসহ নানা ধরনের কৃষিপণ্য বর্ষা মৌসুমে সহজেই কম খরচে নৌকায় এ পথ দিয়ে শাহজাদপুর উপজেলা সদরে নিয়ে আসতে পারে ও পাশের কুমুদীঘির বিলে যাতায়াত করতে পারে। এ কথা মাথায় রেখে জরুরি ভিত্তিতে কালভার্টটি নির্মাণ করা হলেও এটি নির্মাণের বছর পেরোতে না পেরোতেই কালভার্টটির পশ্চিম পাশে আলিফ আলী (৫০) ও তার ছেলে পলাশ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি ফেলে ভরাট করে। এর পরই পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, আলিফ ও ছেলে পলাশ নিজের জায়গা দাবি করে কালভার্টটির একপাশে বালু ফেলে ভরাট করায় এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া কালভার্টের সংযোগ সড়কে মাটি দিয়ে ভরাট না করায় এটি মানুষের কোনো কাজেই লাগছে না। চক্রবর্তী পাড়ার আনিস, কলেজছাত্রী আয়শা বেগম, এসএসসি পরীক্ষার্থী হাঁসি জানান, পোতাজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পাশের ঘোষ পাড়া, গাতির পাড়া, চক্রবর্তী পাড়াসহ ১১টি পাড়ার শত শত মানুষ এ পথে চলাচল করে। তারা জানান, কুমুদীঘির বিলের পূর্বপাশে চক্রবর্তী পাড়ায় যে কালভার্টটি নিয়ে এত কথা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কালভার্টের পাশের বালু অপসারণের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, তারা জানতে পেরেছেন কালভার্টের মুখে বালু অপসারণ না করে বর্ষায় শুধু পানি নিষ্কাসনের জন্য ভরাটকৃত জায়গাতে পাইপ বসানোর উদ্যেগ নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের খুব নিকটেই চক্রবর্তী পাড়া। যাতাযাত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় চক্রবর্তী পাড়া হ এর আশপাশের পাড়ার অনেক মেয়েদের বিয়ে নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
পোতাজিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে চক্রবর্তী পাড়া খালের ওপর ছোট কালভার্টটি সরিয়ে সেখানে একটি বড় কালভার্ট নিমার্ণ করার পর সেটি মাটি দিয়ে ভরাট করায় পুরো টাকাই এখন পানিতে গেছে। এ কারণে কালভার্টটির সংযোগ সড়কে মাটি ভরাটের কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে তিনি বলেন, এলাকার স্বার্থে খুব শিগগির কালভার্টটি সচল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কালভার্টটির উচ্চতার নিয়ে তিনি বলেন স্বাভাবিক বন্যায় এটি ডুবে যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ উপজেলায় ১৩টি কালভার্টের কাজ সাবেক কর্মকর্তা জিন্দার আলী সাহেব করেছেন। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই।
জিন্দার আলী মুঠোফনে জানান, ত্রুটিপূর্ণ নকশায় কোনো কাজ হয়নি। স্থানীয় এলাকাবাসী ও চেয়ারম্যানের মতামত নিয়ে কালভাটটির উচ্চতা ও স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রচের মাটির ভরাটের জন্য ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হয়নি। অচিরেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালভার্টটির পাশে মাটি ভরাট করার পেছনে আমার কোনো হাত নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলা৭১নিউজ/আরএস