বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে দেশের অনেক এলাকায় শুরু হয়েছে নতুন করে দুর্ভোগ। পানিবন্দী হয়ে পড়ার পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে তারা। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। শনিবারও পদ্মা ও গঙ্গার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরই তা স্থিতিশীল হয়ে আসবে। এরপরই পানি কমতে শুরু করবে। ফলে দেশে নতুন করে বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। তারা জানিয়েছে, গঙ্গায় শনিবার পানি বৃদ্ধি পেলেও এর হার ছিল আগের দিনের চেয়ে অনেক কম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক রিপন কর্মকার বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও শনিবার বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে অনেক কম ছিল।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধির হার ওয়ার্নিং লেবেলে ছিল। শনিবার এ হার অনেকটাই কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপরই স্থিতিশীল হয়ে পানি কমতে শুরু করবে।
তিনি বলেন, বিহার ও উত্তর প্রদেশে বন্যার কারণে গত ১৩ আগস্ট থেকে গঙ্গার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তবে ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ার ফলে পানি বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, গেট খোলার বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। সাধারণত এ মৌসুমে ফারাক্কার সব গেটই খোলা থাকে।
একই কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, এ সময়ে গঙ্গার পানি সাধারণত বৃদ্ধি পায়। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে গেট খোলার কোন সম্পর্ক নেই। বিহারের পানি নেমে যাওয়ার কারণেই এই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই পানি নেমে যাবে। এর ফলে দেশে নতুন করে বন্যার কোন আশঙ্কা নেই।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র যমুনা, পদ্মা ও সুরমা নদীর পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে গঙ্গা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গঙ্গা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। শনিবার সকাল ৯টায় গঙ্গা নদীর পানি পাংখা, রাজশাহী ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে যথাক্রমে- ১১, ১১ ও ১২ সেন্টিমিটার এবং মহানন্দা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, ফারাক্কার প্রভাবে রাজশাহীতে পদ্মায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপজ্জনক গতিতে পানি বাড়ায় রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের চারটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন আতঙ্ক। এর মধ্যে পুলিশ লাইন পয়েন্ট সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে রাজশাহী শহরের পদ্মাসংলগ্ন নিচু এলাকাগুলো। বন্যা দেখা দিয়েছে জেলার পবা, চারঘাট, বাঘা ও গোদাগাড়ীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে মানুষ।
কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর পানি প্রতি ৩ ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইভাবে পানি বাড়ছে পদ্মার প্রধান শাখা গড়াই নদীতে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শনিবার ভেড়ামারা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা।
দৌলতপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। উপজেলার দুই ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম এখন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ১৮শ’ হেক্টর জমির ফসল। সেই সঙ্গে পানিবন্দী থাকায় মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিয়েছে। জলমগ্ন হয়েছে চিলমারী, চরচিলমারী, রামকৃষ্ণপুর, ঠোটারপাড়া, সোনাতলা, চরসোনাতলাসহ ৪টি বিজিবি ক্যাম্প ও অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ঈশ্বরদীর মোল্লার চর, সাহেবনগর চর ও গোলাপনগর চরের কয়েক শ’ বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ ও পশুকুল পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার একর জমির ফসলও তলিয়ে গেছে।
শরীয়তপুরে পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পওয়ায় জেলার জাজিরা, নড়িয়া, উপজেলার পদ্মাপাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি পশুখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।
পদ্মাপাড়ে অবস্থিত বিভিন্ন গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। ২ দিনে নদী ভাঙ্গনের ফলে সহায়-সম্বল হারিয়ে ৫ শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে অনেকেই।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ