বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: সারা দেশে অনুমোদনহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। অনুমোদন নিয়ে যারা অবৈধ শাখা চালাচ্ছে তাও বন্ধ করে দেয়া হবে। স্কুলের মনিটরিং সেল, ভর্তি ফি নির্ধারণসহ আরো কিছু শর্ত দিয়ে নীতিমালা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি নানা অভিযোগে পীস স্কুল বন্ধ হওয়ার পর এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দেরিতে হলেও অবশেষে অবৈধ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তবে বন্ধের আগে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের বিষয়টি মাথায় রাখার জন্য অনুরোধ জানান তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, একজন মিষ্টির দোকানদার ট্রেড লাইন্সেল নিয়ে ব্যবসা করেন। আর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাবে তাও অনুমোদন ছাড়া। এটা হয় না।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে সরকারের নিয়ম-নীতি অবশ্যই মানতে হবে। আমরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার অনুরোধ করেছি।
তিনি বলেন, ‘যারা নিবন্ধন নেয়নি শুধু তারা নয়, যারা অনুমোদন নিয়ে অবৈধ শাখা পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহবুবুর রহমান বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো বৃটিশ কাউন্সিলের সিলেবাস ও কারিকুলাম পড়ান। তারা যেহেতু আমাদের সিলেবাস, কারিকুলাম ফলো করে না তাই তাদের খবরদারি আমরা করতে পারি না। শিক্ষা বোর্ড একটি রেজিস্ট্রেশন দেয়। যারা রেজিস্ট্রেশন না দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যাগ নিলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘শুধু ইংলিশ মিডিয়াম নয়, প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসা, সাধারণ স্কুলসহ যারা বাংলা সিলেবাস পড়ান এ রকম কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনহীন। এ রকম যারা অনুমোদন ছাড়া চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে শুরু হবে।’
ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন, অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান আর চলতে দেয়া হবে না। তবে বছরের মাঝামাঝি সময় এসে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অভিভাবকদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আমিনা খাতুন রত্না বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে বছরের মাঝামাঝি সময় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে সন্তানকে কোথায় নিয়ে যাবে।
অভিভাবকদের ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান জিয়াউল কবির দুলু বলেন, বন্ধ না করে এসব প্রতিষ্ঠানের মনিটরিং বাড়ানো, যারা নিবন্ধন নিতে চায় দ্রুত সময়ে তাদের নিবন্ধন দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকারের মনিটরিং-এ অভাবে এসব প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠেছিল। হঠাৎ করে বন্ধ করলে শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে। সরকারের ভুলের জন্য তারা কেনো ভোগান্তিতে পড়বে। এজন্য বন্ধ না করে যারা নিবন্ধন নেয়নি তাদের সেই সুযোগ করে দেয়া উচিত।
আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাংলা বাধ্যতামূলক, টিউশন ফি নির্ধারণসহ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘শুধু ইংলিশ মিডিয়াম নয়, প্রি-ক্যাডেট মাদ্আসা, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় নিবন্ধন ছাড়া হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান চলছে। সরকার এগুলো বন্ধ বা বাগে আনার উদ্যাগ নেয়া উচিত।’
এদিকে খুলতে শুরু করেছে রাজধানীর নামিদামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। সোমবার থেকে সানিডেল ও লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে খুলবে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা ও মাস্টারমাইন্ড স্কুল। আগামী ১৬ আগস্ট খুলবে স্কলাসটিকা, সানবিম ও গ্রীন হেরাল্ড স্কুল।
ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে প্রায় দুই মাস পর কয়েকটি স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ দেখা গেছে। অভিভাবকরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। সব স্কুলেই যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের চিত্র দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড ও ব্যাগ তল্লাশি করে স্কুলে ঢোকানো হয়।
জানা যায়, জুন মাসের প্রথমদিক থেকেই গ্রীষ্মকালীন ও ঈদের ছুটি শুরু হয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে। ছুটি শেষে গত মাসের মাঝামাঝি থেকে একে একে খোলার কথা ছিল স্কুলগুলো। কিন্তু ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দৃশ্যপট বদলে যায়।
নিহত জঙ্গিদের মধ্যে তিনজনই পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। এর মধ্যে দুজন স্কলাসটিকা স্কুলের ছাত্র ছিল। তারা হচ্ছে রোহান ইমতিয়াজ ও মীর সামিহ মোবাশ্বের। এ ছাড়া নিরবাস ইসলাম নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার আগে রাজধানীরই ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে পড়ালেখা করেছে।
সূত্র জানায়, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী থাকায় এবং স্কলাসটিকা স্কুলের শিক্ষার্থীর জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততা থাকার প্রমাণ মেলায় ছুটি শেষে ক্লাস শুরু করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে নামিদামি স্কুলগুলো। একে একে স্কুল খোলার সময় পেছাতে থাকে। দুই-তিন দফা সময় পিছিয়ে সোমবার থেকে কয়েকটি স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ও কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এম নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আতঙ্কের কারণে কিছু স্কুল খুলতে দেরি হয়েছে। তবে সোমবার বেশ কিছু স্কুল খুলেছে।
আগামী ১৬ আগস্ট আরো কিছু স্কুল খুলবে। আর যেসব স্কুল বাকি থাকবে তারাও চলতি মাসের মধ্যেই পুরোপুরিভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ