বাংলা৭১নিউজ(রাঙ্গামাটি)প্রতিনিধি: পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের সামনে ভয়ঙ্কর দিন আসছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলে যারা অযথা রক্তপাতের ঘটনা ঘটাচ্ছে, সামনে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর দিন আসছে। যারা এ অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, গুম করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে, খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, এ দুষ্কৃতকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। তাদের বিচারের মুখোমুখী করা হবে। যারা এগুলো করাচ্ছে, তাদেরও বিচারের মুখোমুখী করানো হবে। যে কোনো মূল্যে পার্বত্য অঞ্চলে রক্তপাত বন্ধ করা হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে তিন পার্বত্য জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন- হঠাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তপাত কেন? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ অঞ্চলে কীভাবে রক্তপাত বন্ধ করা যায়, তা শুনতে এসেছি।
এরপর সভায় উপস্থিত তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামত ও পরামর্শ চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনেকের বক্তব্য শোনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে যা ঘটছে, তা শুনলাম। এখানে কাউকে হত্যা করলে তা থামানো যাচ্ছে না। ভয়ে মামলা করার সাহস পান না কেউ। সাক্ষীও হতে চান না শুনেছি। ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম হচ্ছে, তাও শুনলাম। পার্বত্য অঞ্চল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে থাকবে, অশান্ত থাকেব, মানুষ অশান্তিতে থাকবে- আমরা তা চাই না। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। যে কোনো মূল্যে এ অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনব। তিনি বলেন, কাউকে আর আতঙ্কে থাকতে হবে না। কাউকে চাঁদা দিতে হবে না। এখানে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করতে দেয়া হবে না- আমরা জানতে চাই, সেটা কার স্বার্থে। এই এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে- আমরা তার পরিত্রাণ চাই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে, সর্বহারা পার্টির লোকেরা আত্মসমর্পণ করেছে, জঙ্গিবাদ দমন করা হয়েছে এবং মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনী, পুলিশ, সেনাবাহিনী অত্যন্ত শক্তিশালী। তাই আমরা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, মানুষ হত্যা করছে, চাঁদাবাজি করে মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে- তারা ভুল করছে। বিপথে চলছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব ধরনের সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। যে কোনো মূল্যে এ এলাকায় শান্তির সুবাতাস ফিরিয়ে আনা হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করব। খুব অল্প দিনের মধ্যেই পরবর্তী পদক্ষেপ আসবে।
তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বুধবার রাতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সামরিক, বেসামরিক, প্রশাসনিক, গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীরবাহাদুর উশেসিংয়ের সভাপতিত্বে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলা উচ্চপর্যায়ের এ আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী পুনর্বাসন টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়ল সচিব কামাল উদ্দিন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারি, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুর ইসলাম, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ড. বেনজির আহমেদ, চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজুরি চৌধুরী ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা।
সভায় তিন পার্বত্য জেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, হেডম্যান, কারবারিসহ নারী প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।
বাংলা৭১নিউজ/বিএ