বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: চীনের প্রভাব বিস্তারকে কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সঙ্গে ৭টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। ৫ই অক্টোবরে এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে ভারত তার ঘরের পেছনে চীনের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা জোরালো করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ভারতের অধিকতর ব্যবহারের উপযোগী করে চুক্তি।
এই দুটি বন্দরে ভারতকে প্রবেশাধিকার দেয়ার অর্থই হলো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা সরাসরি বঙ্গোপসাগর দিয়ে ভারত মহাসাগরে কৌশলগত যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে। এই ত্রিপুরা রাজ্য তিন দিক দিয়ে বাংলাদেশের সীমানা ঘিরে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইপোক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এর শিরোনাম ‘ইন্ডিয়া সাইনস সেভেন ডিলস উইথ বাংলাদেশ টু ফেন্ড অফ চাইনিজ ইনফ্লুয়েন্স’।
এতে সাংবাদিক ফ্রাঙ্ক ফ্যাং লিখেছেন, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মতে গত ৫ই অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, উত্তরপূর্ব ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের সরাসরি সুবিধা পাবে ত্রিপুরা। এতে এই রাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্যের অপরিসীম উন্নতি হবে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ওই সাতটি চুক্তির মধ্যে রয়েছে একটি সমঝোতা স্মারকও। তার অধীনে বাংলাদেশের উপকূলে নজরদারি ব্যবস্থা জোরালো করবে ভারত। তারা বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ২০টি রাডার সিস্টেম বসাবে।
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে এবং ভারতের উপকূলে নজরদারি বৃদ্ধি করবে। একই রকম নজরদারি ব্যবস্থা ভারত মালদ্বীপ, মৌরিতিয়াস, সিসিলি, শ্রীলঙ্কাসহ আরো দেশে স্থাপন করেছে। ভারতের ইকোনমিক টাইমসের মতে, সমুদ্রপথে সন্ত্রাসী হুমকি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিতে যথেষ্ট ব্যবহার উপযোগী হবে এই রাডার সিস্টেম। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, অন্য চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে যুব সম্পর্ক বিষয়ক ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদ ও ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার মধ্যে সহযোগিতা, ভারতে পানীয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের পানি দেয়ার চুক্তি।
এই অঞ্চলে চীনের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত। ২০১৭ সালে দোকালামে চীন ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির পর কয়েক ডজন যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করে চীন। তবে বাংলাদেশে বেইজিংয়ের পা রাখা নিয়ে বিশেষ করে উদ্বিগ্ন ভারত। বাংলাদেশের কাছে চীনের সামরিক হার্ডওয়্যার বিক্রি নিয়ে তাদের উদ্বেগ বেশি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ২০ কোটি ৩০ লাখ ডলারে দুটি সাবমেরিন কেনে। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারত।
এ নিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এডমিরাল অরুণ প্রকাশ বলেন, ওই সাবমেরিন হলো এক ধরনের প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ড। তিনি আরো বলেন, এই সাবমেরিন বিক্রি হলো ভারতের ‘ক্লায়েন্ট’ দেশকে কৌশলগতভাবে বেঁধে ফেলা। গত মাসে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে কক্সবাজারে প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বেইজিং। এখানে অবস্থান করবে চীনের ওই দুটি সাবমেরিন। চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পিটিআই এটি নির্মাণ করবে বলে বলা হয়। বাংলাদেশের একটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, এতে খরচ পড়বে ১২০ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র কর্মকর্তা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক খান একটি মিডিয়াকে বলেছেন, ওই ঘাঁটি নির্মাণ করবে চীন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেবে। তবে তিনি নিশ্চয়তা দেন যে, চীনের সামরিক সাবমেরিন ওই ঘাঁটিতে আসবে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে চীন। বিশেষ করে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উদ্যোগ ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড প্রকল্প। এর মধ্য দিয়ে বেইজিং বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে বিশ্বজুড়ে অর্থায়ন করছে। এর উদ্দেশ্য ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করা।
চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার মতে, বাংলাদেশ ও চীন বেশ কয়েকটি ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যার অর্থমূল্য ২১৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে রয়েছে, একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ বিষয়ক প্রকল্প। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে শীর্ষ বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যায় চীন। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৩ কোটি ডলার।
সম্প্রতি মিয়ানমারের সঙ্গেও সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে ভারত। এই মিয়ানমারের সঙ্গেও রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এই সহযোগিতা বৃদ্ধির কারণ হলো সেখানেও চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের পাল্টা জবাব দেয়া। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য কিলো-ক্লাস ডিজেল-ইলেকট্রিক একটি সাবমেরিন হস্তান্তরের জন্য মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: মানবজমিন