বাংলা৭১নিউজ,(লক্ষ্মীপুর)প্রতিনিধি: সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ভয়ে রাতে এলাকায় (ইউনিয়ন) থাকেন না লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ছয় ইউপি চেয়ারম্যান। তারা জেলা শহরে বসবাস করেন। আর উদ্বিগ্ন থাকার কথা জানিয়েছেন আরও পাঁচ চেয়ারম্যান। উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ২১টি।
সূত্র জানায়, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর সদর উপজেলার মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয় উপস্থাপন করা হয়। এ সময় ২৮ সেপ্টেম্বর দত্তপাড়ার ইউপি সদস্য (মেম্বার) খোরশেদ আলম মিরনকে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা ঘটনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। মিরন ওই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। এর আগে গত ২৮ আগস্ট সদর উপজেলার মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিন ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়া এবং নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাসবাস করেন ইউপি চেয়ারম্যান গোলজার মোহাম্মদ, আহসানুল কবির রিপন, নুরুল আমিন, কামরুজ্জামান সোহেল, হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী ও আবু ইউছুফ। এছাড়া নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন বশিকপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদী, দক্ষিণ হামছাদীর এমরান হোসেন নান্নু, বাঙ্গাখাঁর কাজী আনোয়ার হোসেন কাজল, দিঘলীর শেখ মজিব ও তেওয়ারীগঞ্জের ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলু। তাদের মধ্যে কারুজ্জামান সোহেল ছাড়া অন্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে ১০ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের হাসন্দি গ্রামে ছাত্রলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এটি প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মদদে লক্ষ্মীপুরে অন্তত ২২টি ছোট-বড় বাহিনী, উপ-বাহিনী গড়ে ওঠে। এক একটি বাহিনীতে ৫০ থেকে ৩০০ সদস্যও ছিল। হাতে বিপুল সংখ্যক অবৈধ অত্যাধুনিক আগ্নোয়াস্ত্র মজুদ থাকায় অধিপত্য বিস্তার ও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে প্রতিযোগিতামূলক গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে তারা। খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাট নৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। পুলিশ-র্যাবের সঙ্গেও গোলাগুলির ঘটনা ঘঠত অহরহ।
এ অবস্থায় সন্ত্রাস নির্মূলে ২০১৪ সালে উপজেলার পূর্বাঞ্চলে নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা ঘোষণা করে সরকার। ওই বছরের ১ নভেম্বর থানার অনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাস নির্মূলে যৌথ অভিযানে নামে। তখন কয়েকজন বাহিনী প্রধান ও তাদের সহযোগী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। অনেকে দেশত্যাগ ও আত্মগোপনে চলে যান।
চরশাহীর চেয়ারম্যান গোলজার মোহাম্মদ বলেন, আমার এখানে সন্ত্রাসী আর অস্ত্রবাজদের উপদ্রব আছে। বিকেল হলেই আমি ইউনিয়ন থেকে চলে যাই। প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।
কুশাখালীর চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমি নিজেই নিরাপত্তাহীন। রাত গভীর হলেই তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। এলাকার অবস্থা খারাপ। এ জন্য আমি শহরে বাসা ভাড়া নিয়েছি।
লক্ষ্মীপুর আইনজীবি সমিতির সদস্য রাসেল মাহমুদ মান্না বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কিছু সন্ত্রাসী গা-ঢাকা দিয়েছিল, অনেকে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে এখন এলাকায় অপকর্ম শুরু করেছে। তাদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান পরিচালনা করলেই জনগন সুফল পাবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, লক্ষ্মীপুরের পূর্বাঞ্চলে এখনও অন্তত এক ট্রাক অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এসব উদ্ধারের জন্য আমি একাধিকবার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। আওয়ামী লীগে কোনো অপরাধীর স্থান নেই।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, কোনো ইউপি চেয়ারম্যান যদি নিরাপত্তাহীনতা ভোগেন, তাহলে অবশ্যই পুলিশের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে কিছু অস্ত্র উদ্ধারও করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে