বাংলা৭১নিউজ,(রংপুর)প্রতিনিধি: অবশেষে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ না হয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু।
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে লড়াইয়ে প্রাথমিকভাবে জয়ী হলেন জোটের প্রার্থী সাদ এরশাদ। তিনি এখন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুকে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয় সোমবার দুপুরে। এরপর তিনি বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে আসেন।
পরে দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তার দলীয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এ সময় দলের ও অঙ্গসংগঠনের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এর আগে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যহারের বিষয়ে খবর পেয়ে আওয়ামী লীগসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বাচন অফিসের সামনে জড়ো হন। পরে তারা বিকাল সাড়ে ৩টায় কাচারী বাজার জিরো পয়েন্টে দলীয় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের আদেশের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে সেখানে সড়কের ওপর শুইয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।এ সময় দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বিকাল সাড়ে ৩টায় সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের দলীয় সিদ্ধান্তের কথা বোঝাতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন অফিসে যেতে বাঁধা দেয়ার জন্য নেতাকর্মীরা মানব ঢাল তৈরি করে তাকে ঘিরে রাখেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হলে অনেকে কান্নায় তাকে জড়িয়ে ধরেন।
এ পরিস্থিতিতে নগরীর একমাত্র প্রধান সড়কে দুই পাশে তীব্র যানজটের কবলে পড়েন সাধারণ পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।
অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে উপস্থিত সাংবাদিক ও দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, তিনি দলের আদেশ-নির্দেশের বাইরে নন। তিনি বঙ্গবন্ধুর একটি আদর্শিক দলের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তাই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশের প্রয়োজনে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় নেত্রী মনে করেছেন রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া দরকার। সেই রাজনৈতিক বিবেচনায় তিনি এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তাই করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রী বা আওয়ামী লীগের নেত্রী নন, তিনি রাজনৈতিকভাবে মহাজোটের নেত্রী। তাই সব বিবেচনায় রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এখন থেকে তিনি মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানান।
বক্তব্য দেয়ার সময় মাঝে মধ্যে বিক্ষুব্ধ দলীয় নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হওয়ার চেষ্টা করলে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু তাদের শান্ত করেন।
আর কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে এ নিয়ে ৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সোমবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন এ তথ্য জানান।
রংপুর অঞ্চলের এই আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে জাতীয় পার্টির রাহগির আল মাহি সাদ, বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, এনপিপির শফিউল আলম, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল এই ৬ প্রার্থী তালিকায় চূড়ান্ত হিসেবে থাকছেন।
আগামী ৫ অক্টোবর হবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রংপুর সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন নিয়ে গঠিত এ আসনের মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ জন এবং ২ লাখ ২০ হাজার ৭৬২ জন নারী ভোটার।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমান পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট। এবারও ইভিএমে ভোট হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এমএস