বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘সরকার একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য কোটি কোটি মানুষের জীবনের ওপরে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এটাকে আমি মনে করি, শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা তা না, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।’ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) নতুন মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।
আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় অংশ নেন আবুল মকসুদ। ভোক্তাস্বার্থ উপযোগী-পরিবেশবান্ধব এলএনজি ও এলপিজির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের দাবিতে নাগরিক কমিটি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভাপতির বক্তব্যে আবুল মকসুদ বলেন, রাষ্ট্রের সম্পদ ন্যায্যমূল্যে পাওয়া এটা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকারের জায়গা সরকার অন্যায়ভাবে, অন্যায্যভাবে হস্তক্ষেপ করছে। এটার শিকার হবে জনগণ। এই হস্তক্ষেপের কারণ হলো অব্যবস্থাপনা, অপচয় আর দুর্নীতি। এই তিন অপশক্তি মানুষের ওপরে মূল্যবৃদ্ধির যে বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে, তা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
আবুল মকসুদ আরও বলেন, ‘এসব মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মেরুদণ্ড শক্ত নয়। এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে, যা তাঁদের কাজ নয়। এই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয়। স্বেচ্ছাচারিতা করে গ্যাসের দাম বাড়ালে শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিকসহ সব ক্ষেত্রে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। এটাই আমাদের উদ্বেগের বিষয়। আশা করি, সরকার জনগণের স্বার্থ উদ্ধার করবে।’
সুন্দরবনে কয়লাবাহী জাহাজডুবি প্রসঙ্গে আবুল মকসুদ বলেন, ‘এর আগে তেলের জাহাজ, সারবোঝাই জাহাজ ডুবেছে—এসব ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে একটি হাস্যকর ব্যাপার করে আমাদের সরকার। কী করে? পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুই দিনের মধ্যে বলে, না এটাতে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। রাষ্ট্র কী করে মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে! অথচ এ ঘটনার প্রভাব এখন নয়, ১০ বছর ২০ বছর পরে পড়তে পারে।’
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, সারা বিশ্বেই গ্যাসের দাম নির্ধারণ অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। সরকার বিভিন্ন মহলের চাপে পড়ে দাম নির্ধারণ করছে। কিন্তু দাম নির্ধারণের আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে শুনানি করতে হবে।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাবের) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, বিইআরসির আইন লঙ্ঘিত হলেও জ্বালানি বিভাগ এলপিজির মূল্যহার বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারণ হতে দিচ্ছে না। গ্যাস খাতে রাজস্ব ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও গ্যাসের মূল্যহার বেড়েই চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাস চুরি ও ঘুষ-দুর্নীতি বাড়ছে। এসব চুরি, ঘুষ, দুর্নীতি, বৈষম্য কোনো প্রতিকার না করে এলএনজি আসার অজুহাতে আবারও গ্যাসের মূল্যহার গড়ে ৭৫ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। এ বৃদ্ধি অন্যায় ও গণনিপীড়নের শামিল। আমরা এ বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’
এলএনজি ও এলপিজির দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানি করার ওপর জোর দেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে গণশুনানি করতে হবে। সেই শুনানিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকতে হবে। আলোচনা ছাড়া কোনো কিছু করা অন্যায় হবে। এটা নিয়ে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।’
আলোচনায় বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বলেন, যদি এলএনজি ও এলপিজির দাম বাড়ানো হয় তাহলে সরকারের বিশাল একটি রাজস্ব ঘাটতি দেখা যাবে। কারণ, সরকারের একটা বিশাল রাজস্ব আসে এই খাত থেকে। ইতিমধ্যেই দাম যা রয়েছে, তাতে বিশ্বে প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম, রুহিন হোসেন প্রমুখ আলোচনায় বক্তব্য দেন।
বাংলা৭১নিউজ/বিএইচ