নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীনরা জনগণের সব সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেশকে মহাবিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে তারা। জনগণের রাজনৈতিক সব অধিকার খর্ব করে তারা দেশে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এ চেষ্টা সফল হবে না। সরকার পতনের খেলা সময় মতোই হবে। তখন আর সরকার ক্ষমতায় টিকতে পারবে না।’
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মাহামুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন।
মান্না বলেন, ‘সরকারের নির্বাহী আদেশে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। এরপরও বাড়ছে লোডশেডিং, পাওয়া যাচ্ছে না নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস। টাকার মূল্যমান আশংকাজনক অবনমন এবং ডলারের অস্থিতিশীল ও অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাড়ছে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ। তারা গত ১৪ বছরের শাসনামলে বিরোধী মত এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদের দমনের জন্য নানা কালা-কানুন ব্যবহার করে আসছে। এর একটি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এ আইনে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য এমনকি সরকারি দলের নেতাদের নিয়ে ফেসবুক বা অনলাইনে মত প্রকাশের কারণে মামলা, গ্রেফতার এমনকি রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রতিবছর এ হার বাড়ছে।’
মান্না আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০১৮ সালে ৩৪টি, ২০১৯ সালে ২৩টি, ২০২০ সালে ১৯৭টি এবং ২০২১ সালে ২৩৮টি মামলা হয়। ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী পূর্ববর্তী চার বছরে ৬১১টি মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ জনগণের পাশাপাশি জেলে যেতে হয়েছে ৫৩ সাংবাদিককে। এখন নতুন করে, উপাত্ত সুরক্ষা আইন নামে আরেকটি নিবর্তনমূলক আইন পাসের পায়তারা করছে।
এর মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জনগণের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। ব্যক্তিগত যন্ত্রে আড়িপাতার মাধ্যমে তারা জনগণের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার সাংবিধানিক অধিকারকে হরণ করবে। এরই মধ্যে ১৯১টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ ব্যবস্থায় জনগণের পাশাপাশি গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে চায় তারা। এ আইন মৌলিক মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে হরণ করবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে এবারও আমন্ত্রণ পায়নি বাংলাদেশ। এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার ৪ দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও মালদ্বীপসহ বিশ্বের ১১১টি দেশ আমন্ত্রণ পেয়েছে। দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও এক ধাপ অবনমন হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের গত ১৪ বছরের শাসনামলে দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটের মাধ্যমে তারা দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন এবং দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে কেবলমাত্র ক্ষমতাসীনদের অনুগত এবং মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আয়ের পথ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কোনো বিদ্যুৎ না নিয়েই গত ১১ বছরে সরকার বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। গত ৩ বছরেই দেওয়া হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে দেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০, এ ৫ বছরে পাচারকারীরা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। যার মধ্যে শুধু ২০১৫ সালে ১ বছরেই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশিদের নামে জমা টাকার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
মান্না বলেন, সরকার এখন দেশ চালানোর জন্য বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কাছে হাত পাতছে। আইএমএফের ঋণের কিস্তি পাওয়ার পরও সরকারি হিসেবেই দেশে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
চলতি অর্থবছর থেকেই শুরু হবে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ। দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার এবং দুঃশাসনের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশংকাজনক হারে কমেছে। তবে নাগরিক ঐক্য দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই অব্যাহত রেখেছে। আমরা প্রত্যাশা করি, জনগণের যৌগিক, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হবো’।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, জিল্লুর আহমেদ চৌধুরী, মোমিনুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লা কাওসারসহ অনেকে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ