আজ ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর। পবিত্র লাইলাতুল কদর মুমিন মুসলমানের জন্য আল্লাহর দেওয়া সেরা নিয়ামত। যদিও শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো লাইলাতুল কদর তালাশ করার দিক-নির্দেশনা এসেছে, তথাপি অনেক মুসলমান ২৬ রমজান দিবাগত রাতটি ‘লাইলাতুল কদর’ পাওয়ার আশায় যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করে থাকেন। সে হিসাবে আজ ২৬ রমজান মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পালিত হবে কাঙ্ক্ষিত পবিত্র ‘লাইলাতুল কদর’।
দিবসের আলোকরেখা পশ্চিমে মিলিয়ে যাওয়ার পরই মুসলমানের কাছে পরম কাঙ্ক্ষিত মহিমান্বিত রজনী।
মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। তিনি এই শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন। তাফসিরের সহিহ কিতাবগুলোতে আছে, কদরের আর এক অর্থ তকদির এবং পরিমাণ নির্ধারণ। এই রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাদের লিখে দেওয়া হয়।
এমনকি এ বছর কে হজ করবে, তা-ও লিখে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রিজিক, বিভিন্ন হুকুম, যত সন্তান এক বছরে পয়দা হবে, যত মানুষ এক বছরে মারা যাবে-এই রাতে সিদ্ধান্ত করা হয় এবং তা ফেরেশতাদের দ্বারা জারি করা হয়। ইবনে আব্বাস (রা.)-এর উক্তি অনুযায়ী, চার জন ফেরেশতাকে এসব কাজ আঞ্জাম দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা হলেন জিবরাইল, ইসরাফিল, মিকাইল ও আজরাইল (আ.) (কুরতুবি)।
মহান আল্লাহ এই রাতের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাজিল করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কুরআন লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। (হে নবি) আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কোনটি? কদরের রাতটি হাজার মাস থেকে উত্তম। এই রাতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাইল (আ.) তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে প্রতিটি হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হন।
এটা নিরাপত্তা যা (সন্ধ্যা হতে) সুবহে সাদিক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরাতুল কদর)। মহানবি (স.) বলেন, এই রাতের মর্যাদা ১ হাজার মাস থেকে উত্তম। (মিশকাত, পৃষ্ঠা নং-১৭৩) মহানবি (স.) আরো বলেন, ‘যখন কদরের রাত উপস্থিত হয়, তখন জিবরাইল (আ.) বিশাল একদল ফেরেশতাসহ পৃথিবীতে আসেন।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা নং-১৮২)।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে অধিক সম্ভাবনার ভিত্তিতে আজ রাতে সারা দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করে থাকেন। মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত ও গুরুত্ব অনেকাংশে মহিমান্বিত এই রাতের কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে। পবিত্র রমজানের এই রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে নিম্ন আকাশে মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়।
লাইলাতুল কদর উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ওয়াজ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা এবং দোয়া মাহফিল হবে। ফজরের নামাজের পর দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইবাদত ও আমলের সমাপ্তি ঘটবে।
লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মহামারি, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ, অভাব-অনটনসহ বিভিন্ন কারণে হাজার হাজার মানুষ অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। সব সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ