১৯৬০ সালে জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাদের বিভিন্ন স্থানে সরকার পুর্নবাসন করে। কথা ছিল তাদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে, সেটি তো হয়নি; উল্টো অনেক পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সুবিধা পাননি। ওই প্রকল্পের অধীনে সম্প্রতি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নে বিদ্যুতায়ন করা হয়। এ ইউনিয়নের প্রায় ১৩টি গ্রাম বর্তমানে বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দুরে সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বড়াদম, বনভান্তের স্মৃতি মন্দির এলাকা, কামিলাছড়ি, জীবতলীসহ বেশ কয়টি গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ পেল ৬২ বছর পর।
রাঙামাটি সদরের আসামবস্তী হয়ে কাপ্তাই সড়ক, এটি দিয়ে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং রাঙামাটি শহরে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও এর আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের হাজারও মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।
কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সন্নিকটে কয়েকটি গ্রামের মানুষ নানাভাবে তদবির করে পাচ্ছিলেন না বিদ্যুৎ সুবিধা, নানা কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে বিদ্যুৎ সুবিধা পেল বড়াদম, কামিলাছড়ি, জীবতলী, মানিকছড়ি মৌজার ১৩টি গ্রামের বাসিন্দারা। এতে সুবিধা পাবেন এসব গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ।
রাঙামাটির আসামবস্তী-কাপ্তাই সড়কের দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌছে যাওয়ায় যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুতের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
৬২ বছর পরে বিদ্যুৎ পেয়ে আনন্দিত এলাকাবাসী। বরাদম ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বরাদম সুরবালা স্মৃতি বিদ্যাপীঠের কম্পিউটার প্রশিক্ষক মেওয়াইচিং মারমা বলেন, ‘বিদ্যুৎ আসার ফলে আমরা অনেক খুশী। প্রায় দুই মাস হলো এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলো। বিদ্যুৎ দেওয়ার ফলে আমরা এখন বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ক্লাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে পারছি।’
রাঙামাটির বরাদম এলাকার অমিয় চাকমা বলেন, ‘বিদ্যুৎ আসায় আমরা অত্যন্ত খুশী। বিদ্যুতের ফলে আমরা এখন বাসায় ফ্যান, ফ্রিজ, বাতি সব কিছু ব্যবহার করতে পারছি।’
মগবান ইউনিয়নের বরাদমের আওলাদ বাজার এলাকার বাসিন্দা মানুচিং মারমা বলেন, ‘এখানে বিদ্যুৎ আসার পর থেকে গরম থেকে মুক্তি পাচ্ছি। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার আগে খুবই কষ্ট হতো। সোলার দিয়ে কোনো রকমে দিন যাপন করতে হতো।’
মগবান ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পলাশ কুমার চাকমা বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছি তাতেই খুশী। কিন্তু আমাদের একটা দাবি থাকবে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ যাতে আমরা পাই।’
রাঙামাটি সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা বলেন, ‘এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বঞ্চিত ছিল। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ৬২ বছর পর আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি। আমরা এলাকার জনগণ এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিদ্যুৎ আসার পর এই এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও জীবনমানের সমৃদ্ধি দেখছেন বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকল্প পরিচালক।
তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জল বড়ুয়া বলেন, দেশের পার্বত্য অঞ্চলে শত ভাগ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতে ২০১৭ সালের এপ্রিলে শুরু হয় তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। ৫৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের অধীনে ১৬টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ, বিভিন্ন কেভির ১ হাজার ৯৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, এ এলাকায় বিদ্যুতায়নের ফলে কাপ্তাই-আসামবস্তী সড়কে নতুন রিসোর্ট এবং পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ