কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কাইয়ূম মিয়া (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এছাড়া উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
নিহত কাইয়ূম উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের রমিজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুই পক্ষের এ সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ও যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে।
আহতদের মধ্য ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাজিতপুর জুহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। বাকি আহতদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মৌটুপি গ্রামে সরকার বাড়ির বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাফায়েত উল্লাহ ও কর্তা বাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতা মো. তোফাজ্জল হক গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ ৫২ বছর যাবত আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রায় এক ডজন খুনের ঘটনা ঘটেছে।
গত ঈদের পরদিন তোফাজ্জল হকের পক্ষের নাদিম সরকার বাড়ির লোকজনের হাতে খুন হন। এই ঘটনার কয়েকদিন পর কর্তা বাড়ির লোকজনের হাতে সরকার বাড়ির ইকবাল খুন হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের কয়েকশ বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট হয়েছে।
দুটি খুনের ঘটনায় উভয় পক্ষের ২০০ আসামি করে পাল্টাপাল্টি মামলা হয় থানায়। এরইমধ্যে কর্তা বাড়ির নাদিম হত্যা মামলার আসামিরা আদালত থোকে জামিন পেয়ে বাড়িতে চলে এলেও সরকার বাড়ির ইকবাল হত্যা মামলার আসামিরা জামিন না নিয়ে বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে আসলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামলে কাইয়ূম মিয়া বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন।
এ বিষয়ে সরকার বাড়ির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, কর্তা বাড়ির নাদিম মারা গেলে আমাদের গোষ্ঠির কমপক্ষে দুইশ বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন লাগানো হয়। ৫২ বছর যাবত তোফাজ্জল হক তার বংশের লোকজন নিয়ে আমাদেরকে অত্যাচার নির্যাতন করছে, আমার দুই ভাইকে তারা হত্যা করেছে। আজও আমার বংশের কাইয়ুমকে তারা হত্যা করলো।
অপরদিকে প্রতিপক্ষের কর্তা বাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, আজ আমার বংশের লোকজন পলাতক জীবন থেকে বাড়িতে গেলে সরকার বাড়ির লোকজন তাদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। আমরা অত্যাচার নির্যাতন করি না বরং সরকার বাড়ির লোকজনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে আছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, মৌটুপি গ্রামের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দুপুর থেকে এই পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রোগী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ১০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীসহ পুলিশ র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে। মৌটুপি গ্রামের দুটি বংশের বিবাদ দীর্ঘদিনের। তাদের এসব ঘটনায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে