আরব আমিরাতের শ্রমিকদের জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রায় ৪ হাজার স্মার্ট কার্ড বা বহির্গমন ছাড়পত্র তৈরি করার অভিযোগে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোয় (বিএমইটি) সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. সাইদুল ইসলাম ও সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার দুদকের সহকারী পরিচালক রণজিৎ কুমার কর্মকার বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১ এ মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত গ্রুপ বহির্গমন ছাড়পত্রের সংখ্যার সঙ্গে বিএমইটির ওয়েবসাইটে উল্লিখিত ক্লিয়ারেন্স রিপোর্টে আরব আমিরাতের জন্য গ্রুপে ইস্যু করা বহির্গমন ছাড়পত্রের সংখ্যায় তারতম্য দেখতে পায় দুদক।
এছাড়া অনেক সংখ্যা এডিট ও ডিলিট করে কমানো হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে প্রদান করা নিয়োগানুমতির সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা প্রমাণ মিলেছে। বিষয়টি বুঝতে দুদক কর্মকর্তারা বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার বহির্গমন শাখায় দৈনন্দিন গৃহীত কল্যাণ ফিসহ অন্যান্য ফি ও আয়করের পে-অর্ডার ও চালান এবং স্মার্ট ইস্যুর সংখ্যা যাচাই করে।
যাচাইকালে দেখা যায়, অভিযোগপত্রে উল্লিখিত রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের বিএমইটির সফটওয়্যারে উল্লিখিত ক্লিয়ারেন্স রিপোর্টে গ্রুপে ইস্যু করা স্মার্ট কার্ডের সংখ্যার চেয়ে দৈনন্দিন হিসাবে প্রকৃতপক্ষে ইস্যুকৃত স্মার্টের সংখ্যা অনেক বেশি।
দুদকে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৮টি রিক্রুটিং এজেন্সির নামে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১২ মে পর্যন্ত সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নিয়োগানুমতির সংখ্যা ২ হাজার ৯৬০। কিন্তু বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার থেকে স্মার্ট ইস্যু করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৩৮টি। অর্থাৎ অতিরিক্ত আরও ৩ হাজার ৯৭৮টি স্মার্ট কার্ড বিএমইটি অবৈধভাবে ইস্যু করা হয়েছে। যার সঙ্গে বিএমইটির সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ বাকি আসামির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯৭৮টি স্মার্ট বিএমইটি কর্তৃক অবৈধভাবে ইস্যু করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদানের স্বাভাবিক নিয়ম হলো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেওয়ার পর তার কপি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) যাবে।
মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মোতাবেক বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারে অনুমোদিত কর্মীর সংখ্যা অ্যান্ট্রি দেওয়া হয়। এরপর রিক্রুটিং এজেন্সি বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করে। আবেদনপত্রটি নথিতে উপস্থাপন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়।
নথিতে অনুমোদিত হলে সে অনুসারে বহির্গমন/কল্যাণ ফিসহ অন্যান্য ফি ও আয়করের যথাক্রমে পে-অর্ডার ও চালান কপি জমা নেওয়া হয় এবং সফটওয়্যার সিস্টেমে এ অ্যান্ট্রি দেওয়া হয়। অ্যান্ট্রি দেওয়ার পর কর্মীর সংখ্যা মোতাবেক পারমিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। ওই পারমিট নম্বর দিয়ে রাইট করার অনলাইন অনুমতি নিতে হয়।
অনলাইনে পারমিট সাকসেসফুল দেখানোর পর ক্লিয়ারেন্স ফরমে এ রাইট নম্বর লেখা হয়। ডেস্ক সহকারী ও সহকারী পরিচালকের স্বাক্ষরসহ ডাটা অ্যান্ট্রি শাখায় প্রেরণ করা হয়। ওই শাখার সফটওয়্যারে এ কর্মীদের তথ্যাদি অ্যান্ট্রি দেওয়া হয়। পারমিট নম্বরে রাইট নম্বরে উল্লিখিত কর্মীর সংখ্যার সমপরিমাণ কর্মীর তথ্য অ্যান্ট্রি দেওয়া যায়, এর বেশি অ্যান্ট্রি দেওয়া যায় না।
কর্মীর তথ্য অ্যান্ট্রি দেওয়ার পর স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং শাখা থেকে কার্ড প্রিন্ট দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোনো সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের প্রয়োজন হলে তা শুধুমাত্র আইটি শাখার সিস্টেম অ্যানালিস্ট করতে পারেন; অন্য কারও এ সব বিষয়ে কোনো কিছু করার ক্ষমতা বা অ্যাডমিন পাওয়ার নেই।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ